সেরা লিডের দিনে এগিয়ে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক: কলম্বো টেস্টে বাংলাদেশ কি লিড নিতে পারবে? এমন প্রশ্নই তীর হয়ে বিঁধেছিল গত পরশু টাইগার ব্যাটিং কোচ থিলান সামারাবিরার কাছে। তিনি বলেছিলেন, অন্তত ৫০ রানের লিড নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তার শিষ্যদের। কিন্তু গতকাল সেই লক্ষ্যটাকেও পেরিয়ে গেল সফরকারীরা। সাকিব আল হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেনের দৃঢ়তায় নিজেদের শততম টেস্টে ১২৯ রানের লিড নিয়েছে মুশফিকুর রহিমের দল; যা লাল-সবুজদের টেস্ট ইতিহাসে দেশের বাইরে সর্বোচ্চ রানের লিড এটাই। এর আগে ২০১৩ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০৯ রান ছিল সেরা লিড।

দেশের শততম টেস্টে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। অভিষেক টেস্টে ৭৫ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেছেন তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন  সৈকত। দুজনে সপ্তম উইকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গড়েছেন বাংলাদেশের (১৩১) রেকর্ড জুটি। তৃতীয় সেশনে গুটিয়ে যাওয়ার আগে ৪৬৭ রান করে বাংলাদেশ। গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ ওভার বল করার সুয়োগ পেয়ে যান মেহেদি হাসান মিরাজ-শুভাশিস রায়রা। কিন্তু প্রতিপক্ষের কোনো উইকেট নিতে পারেননি তারা। বিনা উইকেটে ৫৪ রান তুলে দিন পার করে দিয়েছে স্বাগতিকরা। তারপরও সফরকারীরা রঙ্গনা হেরাথের দল থেকে ৭৫ রান এগিয়ে।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের চেয়ে ১২৯ রানে পেছনে থেকে ব্যাটিংয়ে নামে শ্রীলঙ্কা। শুরু থেকেই সফরকারী বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন দিমুথ করুনারত্নে ও উপুল থারাঙ্গা। এ জুটি ভাঙার সুযোগ এসেছিল টাইগারদের সামনে। কিন্তু ব্যক্তিগত ১১ রানে শুভাশিস রায় চৌধুরীর বলে মুশফিকের হাতে জীবন পান করুনারত্নে। শেষ পর্যন্ত নিরাপদেই এ দুই ব্যাটসম্যান কাটিয়ে দেন বেলা। স্কোর বোর্ডে যোগ করেন ৫৪টি রান।

এর আগে তৃতীয় দিনের সকালটা দারুণ কাটে বাংলাদেশের। প্রথম দিকে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম কিছুটা তাড়াহুড়া করলেও সময়মতো নিজেদের মানিয়ে নেন ২২ গজে। প্রথম ঘণ্টায় তারা দলীয় স্কোরের সঙ্গে যোগ করেন ৬১ রান। সাকিবের আগে অর্ধশতক পূর্ণ করেন মুশি। কিছুক্ষণ পর ৬৯ বলে পাঁচটি চারে অর্ধশতকের দেখা পান বাঁহাতি অলরাউন্ডারও। এরপর নতুন বলে সুরঙ্গা লাকমাল বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান টাইগার টেস্ট অধিনায়ককে।

মুশফিকের বিদায়ে সাকিবের সঙ্গে জুটি বাঁধেন অভিষিক্ত মোসাদ্দেক হোসেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রমাণ দিয়েই দেশের হয়ে সাদা পোশাকে মাঠে নামেন এ তরুণ ব্যাটসম্যান। আস্থার প্রতিদানও দেন তিনি। সাকিবের সঙ্গে প্রতিপক্ষের বোলারদের বিপক্ষে খেলতে থাকেন চমৎকার। গড়ে তোলেন ১৩১ রানের জুটি। এর মধ্যে সাকিব আল হাসান তুলে নেন তার টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। চা-বিরতির মিনিট দশেক আগে লাকসান সান্দাকানের বলে উড়াতে গিয়ে মিডঅনে দিনেশ চান্দিমালের চমৎকার ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ১৫৯ বলে খেলা তার ১১৬ রানের ইনিংসটি গড়া ১০টি চারে। তাকে হারিয়ে দ্বিতীয় সেশনে ১১২ রান সংগ্রহ করে সফরকারীরা।

দুই তরুণ মোসাদ্দেক আর মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাটে সাড়ে ৪০০ পার হয় বাংলাদেশের। এর পরই এ ইনিংসটাকে বড় করার স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা। কিন্তু এক ওভারেই হেরাথ এলবিডব্লিউর ফাঁদে মিরাজ ও মোস্তাফিজকে সাজঘরে ফেরান। শেষ দিকে একাই লড়লেন মোসাদ্দেক। সফরকারীদের ৪৬৭ রানে পৌঁছে দিয়ে হেরাথের বলে উইকেট ছেড়ে বের হয়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়ে যান। আউট হওয়ার আগে ১৫৫ বলে সাতটি চার ও দুটি ছক্কায় ৭৫ রান করেন এ ডানহাতি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩৩৮

বাংলাদেশ: ১ম ইনিংস: ১৩৪.১ ওভারে ৪৬৭ (তামিম ৪৯, সৌম্য ৬১, ইমরুল ৩৪, সাব্বির ৪২, সাকিব ১১৬, মুশফিক ৫২, মোসাদ্দেক ৭৫, মিরাজ ২৪, শুভাশিস ০*; লাকমাল ২/৯০, পেরেরা ০/১০০, হেরাথ ৪/৮২, গুনারত্নে ০/৩৮, সান্দাকান ৪/১৪০)

শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ১৩ ওভারে ৫৪/০ (করুনারত্নে ২৫*, থারাঙ্গা ২৫*; শুভাশিস ০/১৩, মিরাজ ০/২০, মোস্তাফিজ ০/৬, সাকিব ০/৬, মোসাদ্দেক ০/৫)