সেলাই মেশিনের চাকার সঙ্গে ভাগ্যের চাকাও ঘুরল জবার

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর): এক যুগ আগের কথা মনে হলে গা শিউরে ওঠে গৃহবধূ জবার। সংসারে অভাব যেন হাঁ করে গিলে খাচ্ছিল। রাজমিস্ত্রি স্বামীর আয়ে সংসার চালানো ছিল একরকম অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করা। সামান্য কটা টাকা দিয়ে সংসার চালানো তো দূরের কথা সন্তানের চিকিৎসা আর পড়াশোনা যেন আকাশ কুসুম চিন্তা। আজ আর সে অবস্থা নেই জবার। সেলাই মেশিনের চাকার সঙ্গে ভাগ্যের চাকাও সচল। এখন সংসার চলছে স্বাচ্ছন্দ্যে। সেলাই কাজের পাশাপাশি দিয়েছেন মুদি দোকান। দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে এখন তার আয় মাসিক অন্তত ২০ হাজার টাকা। আর সেখানে রয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল। জবা খাতুন গাংনীর উপজেলা পরিষদ পাড়ার রাজমিস্ত্রি আব্দুস সালামের স্ত্রী।

জবা জানান, তার পিতার অভাবের সংসারে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে তাকে। রাজমিস্ত্রি সালামের সংসারে হাল ধরতে হয়। যে বয়সে বান্ধবীদের সাথে পড়ালেখায় মত্ত থাকার কথা সেই বয়সে রীতিমতো অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে তাকে। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থায় সন্তানের পড়ালেখা আর নিজেদের চিকিৎসা করানো যেন দুঃসাধ্য।

চোখে মুখে যখন অন্ধকার দেখছিলেন জবা, ঠিক সে সময় প্রতিবেশীর পরামর্শে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নেন সেলাই কাজের। কৃতিত্বের সঙ্গে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে একটি এনজিও থেকে ঋণ নেন ১০ হাজার টাকা। ওই টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন কেনেন ও কিছু কাপড় ওঠান। শুরু হয় সেলাই কাজ। কিছু দিনের মধ্যে পরিচিত হয়ে ওঠেন জবা। দূর-দূরান্ত থেকে মেয়েরা আসেন তাদের জামা কাপড় তৈরি করতে। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তার। প্রতি মাসে সেলাই করে তার আয় হয় অন্তত ২০ হাজার টাকা। এ টাকা দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি দোকানে মালামাল কেনা হয়। সেই সঙ্গে একটি মুদি দোকানও দেয়া হয়। দোকানে তার কাজের ও বেচা বিক্রিতে সহায়তা করেন তার স্বামী আব্দুস সালাম ও বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসি।

এদিকে বড় মেয়েকে লেখাপড়া তেমন শেখাতে না পারলেও ছোট মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ তৈরি করতেন চান। ছোট মেয়ে ফাতেমাতুজ্জোহরা স্থানীয় সন্ধানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। দোকানে কাজের পাশাপাশি অন্যদেরও সেলাই প্রশিক্ষণ দেন জবা। প্রতি মাসেই বেশ কয়েকজনকে প্রশিক্ষণ দেন। এখান থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা আয় হয়। সেই সঙ্গে বেকার যুবতীদের হয় কর্মসংস্থান।

জবার প্রতিবেশী আরিফা জানান, এক সময় জবার খুব অভাব ছিল। সেলাই কাজ শিখে এখন তিনি স্বাবলম্বী। তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সেলাই কাজ করছেন তিনি। একই কথা জানালেন প্রতিবেশী সাথী ও রাণী। তারা সবাই সেলাই কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন।

গাংনী মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নাসিমা খাতুন জানান, জবা সেলাই কাজ শিখে তার সংসারে যে সচ্ছলতা এনেছেন এটা প্রশংসার দাবিদার। তার কাজ দেখে অনেকেই মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আবার অনেকেই জবার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বামীর সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। শিক্ষিত বেকার যুবতীদের চাকরির প্রত্যাশা না করে হাতের কাজ শিখে স্বাবলম্বী হওয়ার আহ্বান জানালেন এ কর্মকর্তা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০