আব্দুল্লাহ আল মামুন, বশেমুরবিপ্রবি : শিক্ষক সমিতি কর্তৃক ঘোষিত কর্মবিরতির জেরে গত ৯ নভেম্বর থেকে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি)। এর ফলে তীব্র সেশনজটের শঙ্কায় ভুগছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস, চলমান পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, কয়েক বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, তা আন্দোলনের কারণে শুরু হয়নি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষাজীবন হুমকিতে ফেলে শিক্ষকরা তাদের দাবি আদায় করছেন। ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারবেন কি না, এ নিয়েও চিন্তিত। অনেকে মনে করছেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা পিছিয়ে পড়ায় চাকরির বাজারেও পিছিয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক চৌধুরী তপু বলেন, ‘শিক্ষকরা তাদের নিজস্ব দাবি আদায়ে আন্দোলন করবেন এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে আন্দোলনের উপায় অবলম্বন করতে গিয়ে যদি সরাসরি শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেন ও তাদের জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করেন তা অনুচিত ও অনৈতিক বলে মনে করছি। এমনিতেই মহামারির প্রভাব ও অবকাঠামোগত (ক্লাসরুম সংকট, পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকা) দুর্বলতায় কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক সেশনজটে ভুগছেন। বর্তমানে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন তা আরও বাড়িয়ে দেয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী জীবন নিয়ে আশা হারিয়ে বিষন্নতায় দিন কাটাচ্ছে।
এদিকে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের মাঝেই শিক্ষক সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কার্যক্রম নচল রাখার অভিযোগ উঠেছে। একাধিক সূত্র বলছে, গত সোমবার বঙ্গবন্ধু স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকরা উপাচার্য দপ্তরে তালা দেয়ার পর প্রশাসনিক কর্মবিরতি চলমান থাকলেও বিষয়টা সমাধানে সেখানে যান প্রক্টরিয়াল টিম এবং শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিরা। এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিওতে দেখা যায় প্রক্টরিয়াল টিমে থাকা শিক্ষক সমিতির সদস্যরা বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদের বিষয়টি সমাধানে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করছেন।
একাডেমিক কর্মবিরতি বহাল রেখে প্রশাসনিক কর্মবিরতি ভঙ্গের এ বিষয়টি প্রকাশের পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ফিসারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত আহমেদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকমণ্ডলী ন্যায্য দাবিতে তাদের কর্মবিরতিতে আছেন। সব ন্যায্য দাবিতে বশেমুরবিপ্রবিয়ানদের সমর্থন সব সময় ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত আমার বোধগম্য নয়। বিশেষত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা অধিকাংশই মধ্যবিত্ত এবং নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। তাদের জন্য করোনার দুই বছর শিক্ষা জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর নতুন করে এই একাডেমিক কর্মবিরতি মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, শিক্ষকদের মতামত উপেক্ষা করে রিজেন্ট বোর্ডে ইউজিসি কর্তৃক সুপারিশকৃত শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন নীতিমালা পাস করার প্রতিবাদে সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে ৯ নভেম্বর অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।