তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী: দিগন্তজোড়া সবুজের মাঠে এক টুকরো জমিতে কালচে রঙের ধানক্ষেত চোখে পড়ার মতো। ক্যানসার-প্রতিরোধী অ্যান্টি-অক্সিডান্ট পুষ্টিসমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল ‘ব্ল্যাক রাইস’ চাষ করে সাড়া ফেলেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরের কৃষক শফিকুল ইসলাম বাবু। উপজেলা শহরের নিয়ামতপুর দেওয়ানিপাড়া মহল্লার শফিকুলের জমিতে নতুন জাতের এ ধান সবার নজর কাড়ছে। এ ধরনের ধান চাষে রোগবালাই না থাকায় ভালো ফলনের আশা কৃষক শফিকুলের। উচ্চফলনশীল এসব ধান চাষ বৃদ্ধি করতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, অন্যান্য ধানের মতো এ ধানগাছ দেখতে সবুজ কিন্তু ধানগুলো (ব্ল্যাক) কালো। প্রতিটি গাছের ডগায় দুলছে কালো ধানের শিষ। এ ধান দেখতে ভিড় করেছেন এলাকার মানুষ। ‘ব্ল্যাক রাইস’ নিয়ে কৃষকের মাঝে কৌতূহলের শেষ নেই।
কৃষক শফিকুল বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে একটি ন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করি। আমার আগ্রহ ছিল নতুন জাতের ফসল কীভাবে ফলানো যায়। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে এ কালো ধান চাষের প্রতি আগ্রহ জন্মে। ওই কোম্পানির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে আমি জানতে পারি ‘ব্ল্যাক রাইস’ ধান বাংলাদেশে আছে। সেই কর্মকর্তা একজন কৃষককে দিয়ে ব্ল্যাক রাইস ফলানোর চেষ্টা (ডোমোট্রায়াল) করেন। কিন্তু সেই কৃষক ঠিকমতো ধান ফলাতে পারেননি। পরে তিনি আমাকে ৫০০ গ্রাম ধানের বীজ দেন। এরপর এ ধান চাষ শুরু করি, তবে তেমন একটা সার-কীটনাশকের প্রয়োজন হয়নি। পোকামাকড় নেই বললেই চলে।
তিনি বলেন, এ ধান যখন হয়ে গেল তখন স্থানীয়রা ধান দেখতে আসেন। এ ধানের ফলন অন্য ধানের চেয়ে ভালো। সবাই এ ধানের বীজ নেয়া জন্য অস্থির হয়েছে। যদি বীজের ভালো দাম পাই, তাহলে এলাকার কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করব। আমার ২২ শতক জমিতে বীজসহ সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা। সেখানে ৬ থেকে ৭ মণ ধান হবে। এবারে বীজের জন্য সংরক্ষণ করে বিক্রি করা হবে। এবারের ফলন ও দাম নির্ভর করছে পরবর্তী আবাদের ওপর।
একই এলাকার কৃষক মাজেদুল বলেন, আমার চাচাতো ভাই শফিকুল প্রথম ব্ল্যাক রাইস বা কালো ধান আবাদ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। ধানটি দেখতে ভালো লাগছে। যদি এটা উন্নতমানের হয়, তাহলে আমরাও আবাদ করব।
সৈয়দপুরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনিমেষ মজুমদার জানান, এ ধান বিঘাপ্রতি ১২-১৩ মণ ধান হতে পারে। এটি আমন ধানের মতোই সার প্রয়োগ, কীটনাশক স্প্রে, পরিচর্চা ও কর্তন করতে হয়। তবে তুলনামূলকভাবে আমন ধানের চেয়ে সার, স্প্রে, পরিচর্চা সবকিছুই কম লাগে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা বেগম বলেন, সৈয়দপুরে আগাম সবজি ও বোরো ধান ভালো আবাদ হয়। এখানে শফিকুল নামে এক কৃষক ব্যক্তিগতভাবে একটি নতুন জাতের ধান যেটিকে ব্ল্যাক রাইস বলে। সেটির বীজ সংগ্রহ করে উপজেলার দেওয়ানী পাড়ায় ২২ শতক জমিতে রোপণ করেছেন। ধানটি আমাদের নজরে আসে। তবে এ ধানে পুষ্টিগুণ বেশি থাকতে পারে। পুষ্টি গুণের বিষয়টি কিন্তু গবেষণার বিষয়। গবেষণায় যদি পাঠানো যায় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান যদি বিষয়টি নজরে আনে তাহলে হয়তো বলতে পারবে যে, ধানে পুষ্টিগুণ কতটুকু আছে। এ ধান আবাদের ক্ষেত্রে পোকামাকড়ের আক্রমণসহ অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারে পরামর্শ চাইলে অবশ্যই কৃষি বিভাগ তার পাশে থাকবে।
উল্লেখ্য, কৃষি অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ও ধান গবেষক ড. মেহেদি মাসুদ বাংলাদেশে এ জাতের ধান নিয়ে আসেন। এ ধানে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিজেন থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে থাকা ফাইবার হার্টকে রাখে সুস্থ। কালো চাল ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক।