প্রতিনিধি, সৈয়দপুর (নীলফামারী):উত্তরাঞ্চলের শিল্প ও বাণিজ্যের শহর সৈয়দপুরসহ আশেপাশের এলাকাগুলোয় ঘনঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অপরদিকে লোডশেডিংয়ের ফলে শিল্পকারখানার মেশিনপত্র নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদনেও মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে শিল্প মালিকদের। সৈয়দপুরের বিভিন্ন শিল্প মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে শহরের মার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকায়। দিন-রাত মিলিয়ে ১০-১২ বার লোডশেডিংয়ের ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো জেনারেটর এবং আইপিএস-নির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে করে প্রতিষ্ঠান মালিকের যেমন ব্যয় বাড়ছে, তেমনি বেচাকেনায় প্রভাব পড়েছে ।
সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর সেঞ্চুরি প্লাইউড, আরিভ ওভেন, খলিল অটোমেটিক ফ্লাওয়ার মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল ইসলামসহ অন্য শিল্প মালিকরা জানান, দিন ও রাত মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ১০-১২ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। ফলে তাদের ফ্যাক্টরির মেশিন চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। এতে তাদের প্রতিষ্ঠানের মালামাল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। তার ওপর লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্যাক্টরির মূল্যবান অনেক মেশিন নষ্ট হচ্ছে। এতে তারা বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এমন কথা বলছেন সৈয়দপুরের ক্ষুদ্র শিল্প মালিকরাও। গতকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও সৈয়দপুরসহ আশেপাশের এলাকায় লোডশেডিং হয়েছে একাধিকবার। শহরের সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেটের কম্পিউটার ও ফটোকপি দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রায় অধিকাংশ দোকানের কম্পিউটারের পাওয়ার সাপ্লাই নষ্ট হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীরা জানান, বিদ্যুতে যদি আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হই, তাহলে কেন এত লোডশেডিং। শহরের শহিদ ডা. জিকরুল হক সড়কের একতা অফসেট প্রিন্টিং প্রেসের মেশিনম্যান জিয়াউল হক জানান, অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে তারা মেশিন চালাতে পারছেন না। মেশিনপত্র নষ্ট হওয়ার ভয়ে রয়েছেন তারা। এদিকে গত কয়েক দিন থেকে অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে আবাসিক এলাকার মানুষজনও চরম অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছেন। তারা রান্নাবান্না ছাড়াও বাসাবাড়ির অন্যান্য কাজকর্ম করতে পারছেন না। শহরের হাতিখানা এলাকার গৃহিণী সুলতানা বেগম (৪০) জানান, তীব্র গরমে এমনিতে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা, তার উপরে লোডশেডিং। সন্তানদের পড়াশোনায় ব্যঘাত ঘটছে। সবমিলিয়ে কঠিন অবস্থা বিরাজ করছে বর্তমানে।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) সৈয়দপুর বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্র সূত্র জানায়, শিল্প-বাণিজ্যের প্রধান শহর সৈয়দপুরে প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে প্রতিদিন ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু গড়ে প্রতিদিন মিলছে ১৫ থেকে ১৮ মেগাওয়াট। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) সৈয়দপুর বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রাহকদের সমস্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জানান, শিগগির বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।