শেয়ার বিজ প্রতিনিধি, সৈয়দপুর: সৈয়দপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর সড়ক প্রশ্বস্তকরণের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষের পথে। দৃষ্টিনন্দন সজ্জায় দুই লেনের সড়ক নির্মাণের এ মেগা প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৭ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সৈয়দপুর পৌরসভা। এ সড়কের নির্মাণ সমাপ্ত হলে পাল্টে যাবে শহরের দৃশ্যপট। যান চলাচলে ফিরে আসবে শৃঙ্খলা।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ক্রমবর্ধমান নগরমুখী জনসংখ্যা ও যানবাহনের চাপ সামাল দিতে পরিকল্পিত সড়ক নির্মাণে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের মিউনিসিপ্যাল গভর্নেন্স অ্যান্ড সার্ভিসেস প্রজেক্টের (এমজিএসপি) আওতায় ওই মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধীন একমুখী বিমানবন্দর সড়ককে দুই লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। শহরের পাঁচমাথা সড়ক মোড় থেকে পার্বতীপুর সড়ক মোড় ও বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়ক ৪৫ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে। বিমানযাত্রী ও শহরবাসীর যাতায়াত নির্বিঘœ ও যানজটমুক্ত করতে সড়কটি উন্নীত করা হচ্ছে দুই লেনে। একই সড়কে দু’পাশে নির্মাণ করা হয়েছে হাঁটাপথ (ফুটপাত); যা হয়েছে টাইলস দিয়ে মোড়ানো। সড়কটি দৃষ্টিনন্দন করতে সড়কে মধ্যবর্তী বিভাজনে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করা হবে। এতে করে সড়কটি হবে পরিবেশবান্ধব সবুজায়ন।
বৃষ্টি ও বর্ষায় পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়কের দুই পাশে নির্মাণ করা হয়েছে কংক্রিটের ড্রেন। ড্রেনটি বর্জ্য মুক্ত ও পানি নিষ্কাশন সচল রাখতে এর ওপর বসানো হয়েছে কংক্রিটের সøাব। রাতের বেলা সড়কের সৌন্দর্য বাড়াতে এলইডি বাতি দিয়ে সজ্জিত করা হবে। এজন্য রোড ডিভাইডারের মাঝখানে বসানো হয়েছে লাইটপোস্ট। পোস্টগুলোয় এলইডি লাইট সংযোগের কাজ চলছে। কয়েক দিনের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংযোগের কাজ শেষ হলে আলোকিত হবে দৃষ্টিনন্দন সড়কটি। এমন পরিকল্পনা নিয়ে এ মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে দ্রæতগতিতে। নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ সম্পন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
এদিকে সড়কের নির্মাণকাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাংকের কারিগরি দল কাজের সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। ইতোমধ্যে কাজের অগ্রগতি দেখতে এমএসপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংকের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধি দল কয়েক দফা কর্ম এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করে প্রকল্প সম্পর্কে তাদের পরামর্শ তুলে ধরেছেন। কাজের অগ্রগতি ও গুণগতমান দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বৈঠকে তারা সৈয়দপুর পৌরসভার নগর উন্নয়নে অন্যান্য খাতেও অর্থ বরাদ্দের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
জানতে চাইলে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার জানান, সৈয়দপুরের এ মেগা প্রকল্পের সুফল যাতে শহরবাসী দ্রæত সময়ের মধ্যে পান তার জন্য কর্মযজ্ঞ চলছে। এ কাজের গুণগত মান বজায় রাখতে পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ নিবিড়ভাবে কাজ করছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা ২০১৮ সালের নববর্ষের সূচনায় সড়কটি উপহার দিতে চাই সৈয়দপুরবাসীকে।
প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাদের এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ হোসেন সানু বলেন, প্রকল্পের নির্মাণ শর্ত মেনে সড়কটি নির্মাণে মান বজায় রাখা হচ্ছে। বাস্তবায়নের লক্ষ্যস্থির করা হয়েছে ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রæয়ারি। তবে তার আগেই কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। দ্রæত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে প্রকৌশলীদের সঙ্গে ২০০ শ্রমিককে কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন বলেন, বর্তমান সরকারের দেশজুড়ে ধারাবাহিক উন্নয়নের কর্মকাণ্ডের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এটি। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে সার্কভুক্ত দেশের আঞ্চলিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে সরকারের। বিমানবন্দর সড়ক উন্নয়ন তারই অংশ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও বিশিষ্ট শিল্পপতি রাজ কুমার পোদ্দার বলেন, একমুখী এ সড়কের কারণে বিমানযাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হতো। এর উন্নয়ন আমাদের প্রত্যাশিত ছিল। এটি চালু হলে শহরের দৃশ্যপট বদলে যাবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বর মাসে এ মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ কাজের উদ্বোধন করেন পৌর মেয়র অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার। এ প্রকল্প ১৫ মাস মেয়াদের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যস্থির করা হয়েছে।
Add Comment