Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 1:43 pm

সোনামসজিদে জানুয়ারিতে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ১৬০ শতাংশ

## জানুয়ারি মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৯৬ কোটি টাকা বেশি আদায়

## শুল্ক কমানোর ফলে জানুয়ারি মাসে আমদানি হয়েছে ৫০০০ মেট্রিক টন চাল

রহমত রহমান: দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ। এ স্থলবন্দর দিয়ে ডিসেম্বরের ধারাবাহিকতায় জানুয়ারি মাসেও আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে, সঙ্গে বেড়েছে রাজস্ব আহরণ। জানুয়ারি মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৪৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়েছে। আর রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৬০ শতাংশ। শুল্ককর কমানোর ফলে এ বন্দর দিয়ে চাল আমদানি বেড়েছে।

শুধু জানুয়ারি মাসে ভারত থেকে প্রায় ৫০০০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য পণ্য আমদানিও বেড়েছে। এ শুল্ক স্টেশনে জনবল দ্বিগুণ করা হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে সেবার মান। দৈনিক দাখিল হওয়া প্রায় ৯০ শতাংশ বিল অব এন্ট্রির পণ্য দৈনিক খালাস হচ্ছে। পরিবেশ তৈরি হওয়ায় এ বন্দরের প্রতি ব্যবসায়ীদের আস্থা বাড়ছে। ফলে আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে।

সোনামসজিদ স্থল শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছর সোনামসজিদ স্থল স্টেশনের মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪৮১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৩০৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আদায় হয়েছে প্রায় ৩২৪ কোটি দুই লাখ টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১৯ কোটি ছয় লাখ টাকা বেশি আদায় হয়েছে। সাত মাসে এ স্টেশনের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে গত অর্থবছর জানুয়ারি পর্যন্ত (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব আদায় হয়েছিল প্রায় ১১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় এ অর্থবছর জানুয়ারি পর্যন্ত বেশি হয়েছে প্রায় ২১৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৫২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আদায় হয়েছে প্রায় ৯৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। গত অর্থবছর জানুয়ারি মাসে আদায় হয়েছিল প্রায় ৩৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর জানুয়ারি মাসে বেশি আদায় হয়েছে প্রায় ৫৯ কোটি ১১ লাখ টাকা, প্রবৃদ্ধি ১৫৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। শুধু জানুয়ারি মাস নয়, ডিসেম্বর মাসেও এ স্টেশনে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে। ডিসেম্বর মাসে আদায় হয়েছে প্রায় ৮৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যেখানে গত অর্থবছর একই মাসে আদায় হয়েছিল প্রায় ১৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

এছাড়া চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ২২৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের ১২ মাসের চেয়ে বেশি। সোনা মসজিদ স্থল কাস্টমস স্টেশনে ২০১৮-১৯ অর্থবছর রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩০১ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছর আদায় হয়েছিল ২১৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

সূত্রমতে, এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর, ভুট্টা, ভুসি, চিড়া, কিছু মেশিনারিজ, পোলট্রি ফিড, ফ্লাইঅ্যাশ ও পেঁয়াজ আমদানি হয়। মৌসুমি ফল যেমন কমলা, আঙ্গুরসহ বিভিন্ন ফল আমদানি হয়। নেট মশারি, পাটের ব্যাগ, পাটের দড়ি, রাইস ব্রান অয়েল ও কিছু গার্মেন্ট পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়। তবে এ বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের ৬০ শতাংশই পাথর। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় বর্তমানে দৈনিক প্রায় দেড় শতাধিক পাথরবোঝাই ট্রাক এ বন্দরে আসছে। পাথর আমদানি থেকেই বেশি রাজস্ব আদায় হচ্ছে। এ স্টেশন দিয়ে গত সাত মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে পাকুর স্টোন চিলস, সয়াবিন মিল থেকে। শুল্ক কমানোর ফলে জানুয়ারি মাসে চাল আমদানি বেড়েছে। জানুয়ারি মাসে প্রায় ৫০০০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে।

অপরদিকে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি মৌসুমি ফল আমদানি হয় ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে। তবে এ বছর সোনামসজিদ দিয়ে মৌসুমি ফলের আমদানি বেড়েছে। এখন দৈনিক ৩০-৩৫টি ফলের ট্রাক এ বন্দর দিয়ে দেশে ঢুকছে। ফল থেকেও রাজস্ব আহরণ বেড়েছে। এছাড়া স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ বন্দর দিয়ে কাক্সিক্ষত মাত্রায় আমদানি-রপ্তানি হয়নি। সম্প্রতি বেশ কিছু সমস্যার সমাধান হওয়ায় আমদানি-রপ্তানির পথ সুগম হয়েছে। এর ফলে রাজস্ব আহরণ বাড়ছে।

সূত্র আরও জানায়, রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেট এ শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে বদ্ধপরিকর এবং আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি ও শুল্কফাঁকি রোধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তবে সুযোগসন্ধানী একশ্রেণির অসাধু আমদানিকারক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সহায়তায় রাজস্ব ফাঁকি দিতে সব সময় তৎপর। বিশেষ করে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে এ রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করা হয়। গত ছয় মাসে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়িকভাবে বাতিল কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফাঁকি রোধে কাস্টমস তৎপরতা বাড়ানোর ফলে সফলতা আসতে শুরু করেছে।

এ বিষয়ে সোনামসজিদ স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার মমিনুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সেবার মান আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। জনবল দ্বিগুণ করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানিতে সব প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। ফলে আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে, বেড়েছে রাজস্ব। জানুয়ারি থেকে চাল আমদানি বেড়েছে। প্রতিদিন যেসব বিল অব এন্ট্রি পড়ে, তার মধ্যে ৯০ শতাংশ দৈনিক পণ্য খালাস হয়। কোনো পণ্য খালাস বিলম্ব হলে প্রয়োজন বোধে ছুটির দিন শুক্রবার খোলা রেখেও পণ্য খালাস করা হয়। অনুকূল পরিবেশ আর স্টেকহোল্ডারদের আস্থা তৈরি হওয়ায় এ শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি প্রতিনিয়ত বাড়ছে।’