সোনামসজিদ বন্দরে ১৩ দিন ধরে পাথর আমদানি বন্ধ

প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে গত ১৩ দিন ধরে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ বন্দর দিয়ে প্রধান আমদানি পণ্য ভারতীয় পাথর। ভারত থেকে পাথর ও ফ্লাই-অ্যাশ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। বন্দর ব্যবস্থাপনা সংস্থা পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের অযাচিত ট্যারিফ সংযোজনের মৌখিক নির্দেশে পাথর ও ফ্লাই-অ্যাশ আমদানি বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারকরা। ১৭ নভেম্বর থেকে বন্দর দিয়ে ঢোকেনি পাথর ও ফ্লাই-অ্যাশবাহী কোনো ট্রাক। তবে পানামা কর্তৃপক্ষ জানান বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ২০০ ট্রাক পাথর ও ফ্লাই-অ্যাশ আমদানি হয়। প্রতি টনে ৭৭৬ টাকা হারে সরকার ট্রাকপ্রতি রাজস্ব পায় ৩৯ হাজার টাকা। সেই হিসাবে দিনে এ বন্দর থেকে কেবল পাথর ও ফ্লাই-অ্যাশেই সরকারের রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ৭৮ লাখ টাকার মতো। গত ১৭ নভেম্বর থেকে বন্দরে ঢোকেনি পাথর ও ফ্লাই-অ্যাশবাহী কোনো ট্রাক। ফলে সরকার এ কয়দিনেই রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা।

আমদানিকারকরা বলছেন, সরকারি রাজস্ব বাদেও ট্রাকপ্রতি এতদিন বন্দর ট্যারিফ নির্ধরিত ছিল ৭৮৩ টাকা করে। এর ৫১ শতাংশই পান পানামা। বাকি ৪৯ শতাংশ যায় সরকারে রাজস্ব খাতে। বন্দর চালুর পর থেকেই অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখেনি পানামা। উল্টো বন্দরের অবকাঠামোগত সংকটের কারণে বাইরে মালামাল খালাস করে আসছিলেন আমদানিকারকরা। হঠাৎ (১৪ নভেম্বর) ট্যারিফ প্রতি টনে আরও ১৬২ টাকা আরোপের মৌখিক নির্দেশনা দেয় পানামা। একই সঙ্গে বন্দরের ভেতরে পণ্য খালাসের নির্দেশ দেয়। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের বৈঠকের পর সুরাহা না হওয়ায় পাথর আমদানি বন্ধ করে দেন আমদানিকারকরা।

আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতীয় প্রান্তে অতিরিক্ত খরচ, ডাম্পিং, পাথরের গুণগতমান, ধুলাবালি মিশ্রিত পাথর, একাধিক সাইজের মিশ্রিত পাথরসহ নানা অসুবিধায় এতদিন তারা চরম বেকায়দায় ছিলেন। এর সঙ্গে নতুন করে পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেড অযাচিত ট্যারিফ সংযোজন ও বন্দরের ভেতরে পণ্য খালাসের ঘোষণা দিয়েছে। ব্যবসায় লোকসান ঠেকাতে বাধ্য হয়ে আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় বেকার বসে রয়েছেন এখানকার শ্রমিকরা। শ্রমিক সর্দার আতাউর রহমান জানান, স্থলবন্দরে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার শ্রমিক পণ্য খালাস-বোঝাই নিয়োজিত থাকেন। দিনে অন্তত ৫০০ টাকা করে মজুরি পান এরা। কিন্তু বন্দরে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় একেবারেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। এতে নিদারুণ কষ্টে দিন যাচ্ছে বন্দর শ্রমিকদের।

এ বিষয়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের দপ্তর সম্পাদক নূর আমিন বলেন, এমনিতেই নানা সংকটে কোনো রকমে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন এখানকার আমদানিকারকরা। তার ওপর নিজেদের স্বার্থে অযাচিত ট্যারিফ চাপাচ্ছে পানামা। এতে লোকসান ঠেকাতে বাধ্য হয়ে আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এ পরিস্থিতিতে আমদানিকারকরা যেমন আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন, তেমনি সরকারও প্রতিদিন মোটা অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। অযাচিত এ ট্যারিফ সংযোজন থেকে পানামাকে ফিরে আসার আহ্বান জানান নূর আমিন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার বেলাল হোসেন জানান, ট্যারিফ সংযোজন পানামার নিজস্ব কোনো বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। তিনি আরও বলেন, গত ১৪ নভেম্বর বন্দরে এসেছিলেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (ট্রাফিক) ড. শেখ আলমগীর হোসেন। তিনি সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন। পরে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন। এরপরই ট্যারিফ সংযোজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০