সোনার বাংলা ও সমবায় বাংলা এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন

হরিদাস ঠাকুর: ৩০ জুন ১৯৭২ বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন কর্তৃক আয়োজিত সমবায় সম্মেলনে প্রদত্ত বাণীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবায় সম্পর্কে তার ঐতিহাসিক দর্শন এবং স্বপ্নের কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন: ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে উন্নত জীবনের অধিকারী হবে এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন। এই পরিপেক্ষিতে গণমুখী সমবায় আন্দোলনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে হবে। কেননা সমবায়ের পথ-সমাজতন্ত্রের পথ, গণতন্ত্রের পথ।’ বঙ্গবন্ধুর এ ঐতিহাসিক বক্তব্যেই তার স্বপ্ন-উন্নয়ন দর্শন ও সমবায় একাকার হয়ে ‘সোনার বাংলা’ ও ‘সমবায় বাংলা’ কর্মযজ্ঞ একসূত্রে গ্রোথিত হয়েছে।

জাতির পিতার সমবায় দর্শনের ঐতিহাসিক বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করলে বাংলাদেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কয়েকটি প্রত্যয় খুঁজে পাওয়া যায়। এগুলো হলোÑ (১) দেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদার পরিপূরণ; (২) বাংলাদেশের জনগণের জীবনমান হবে উন্নত; (৩) গণমুখী সমবায় আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন নিয়ামক হবে; (৪) সমবায় হবে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলার উৎসারক; (৫) সমবায়ের  জাদুস্পর্শে জাগরিত হবে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণ। (৬) সুপ্ত গ্রাম বাংলার জাগরণেই বাংলার জনগণের জীবনমুখর হবে এবং (৭) নবসৃষ্টির উš§াদনায় উদ্বেলিত হবে বাংলাদেশ। উপরোক্ত ৭টি উন্নয়ন নিয়ামক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ তথা ‘সোনার বাংলা’ ও ‘সমবায় বাংলা’ বিনির্মাণ সূচকের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং জাতির পিতার দূরদর্শী উন্নয়ন ভাবনারই প্রতিফলন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন দর্শন ছিল এ দেশের গণমানুষের সুখ সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক গভীর মানবিক সংগ্রামী দর্শন (ফববঢ়-ৎড়ড়ঃবফ যঁসধহব ঢ়যরষড়ংড়ঢ়যু ঃড়ধিৎফং ঢ়বড়ঢ়ষব’ং বিষষনবরহম)। বঙ্গবন্ধুর এ দর্শনের ভিত্তিমূল হলো একটি ঐতিহাসিক বিশ্বাস যে কেবল জনগণই ইতিহাস সৃষ্টি করে (ড়হষু ঢ়বড়ঢ়ষব পধহ সধশব যড়ংরঃড়ৎু) অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন হলো অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক মুক্তি মধ্যস্থতাকারী উন্নয়ন দর্শন যার বিনির্মাণে নিয়ামক ভ‚মিকায় থাকবে জনগণ। বঙ্গবন্ধুর গভীর মানবিক সংগ্রামী এ উন্নয়ন দর্শনের প্রতিফলনই হলো তার স্বপ্ন ‘সোনার বাংলার স্বপ্ন’, ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন’, ‘শোষণ-বঞ্চনা-দুর্দশামুক্ত বাংলাদেশ এর স্বপ্ন’। এ স্বপ্ন প্রতিফলিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু ডাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, যেখানে স্বপ্ন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে জনগণের জন্য কমপক্ষে ২টি বিষয় নিশ্চিত করা-(১) মানুষে-মানুষে বৈষম্য দূর করা এবং (২) অসাম্প্রদায়িক মানস কাঠামো বিনির্মাণ। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন অনুযায়ী স্বাধীন বাংলাদেশ হবে ‘সুস্থ-সবল-জ্ঞান সমৃদ্ধ-ভেদহীন উন্নত ও সমৃদ্ধশালী একটি সংস্কৃতিমান মানুষের দেশ’।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ়প্রত্যয় বারবার ব্যক্ত করেছিলেন। স্বাধীনতার আগেও পাকিস্তানকালে পূর্ব বাংলা তথা এই ভ‚খণ্ড নিয়ে তিনি ‘সোনার বাংলা’র ধারণা ব্যক্ত করেছিলেন। তার সোনার বাংলার ধারণার মধ্যে মাটি ও মানুষের প্রতি ছিল অগাধ আস্থাÑ যা কাজে লাগানো গেলে এই দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে অবস্থান নিশ্চিত করবেই। বঙ্গবন্ধু বাংলার মাটি ও মানুষের সম্পর্কে ছিলেন গভীরভাবে আস্থাশীল। সে কারণেই ১৯৬৯ সালে বৈষম্যের চিত্রসংবলিত তার একটি সাড়া জাগানো প্রচারপত্রের নাম ছিল ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন?’। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান ও বাংলাদেশ তথা  পূর্ব পাকিস্তানের মাঝে বিদ্যমান বৈষম্যের বিপরীতে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শোষণ এবং দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধ এক ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার চিন্তা ও চেতনা, কর্ম ও সাধনা জুড়ে ছিল বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি। জাতির পিতা তার স্বল্প সময়ের শাসনকালে একদিকে যেমন স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার সুদূরপ্রসারী এবং বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা এঁকেছিলেন, অন্যদিকে তা বাস্তবায়নে সব যুগান্তকারী পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন। তিনি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রে রেখে গেছেন অনুকরণীয় দিকনির্দেশনা। তিনি দেশের গন্তব্য যেমন নির্ধারণ করেছেন, তেমনি গন্তব্যে পৌঁছানোর পথনকশাও তৈরি করে গেছেন।

বঙ্গবন্ধু কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের সব সূচকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে জনগণের অধিকার, সমতাভিত্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান প্রণীত হয়েছিল। বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তিনি দেশকে করেছেন সমৃদ্ধ। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপনের কারণেই বাংলাদেশ আজ স্বনির্ভর। বঙ্গবন্ধু ইংরেজ উপনিবেশ ও পাকিস্তানি আধা-উপনিবেশ এবং সামন্ততান্ত্রিক শাসন ও শোষণে নিঃস্ব বাঙালি জাতিকে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বাদ এনে দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। পাকিস্তানি অপশক্তির গভীর ষড়যন্ত্র, শত অত্যাচার, নির্মম-নির্যাতন, জেল-জুলুম তাকে অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে একচুলও বিচ্যুত করতে পারেনি। পাকিস্তানি বর্বর শাসকবর্গের দীর্ঘ সময়ের বঞ্চনা, নিপীড়ন ও অত্যাচার থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিরামহীন সংগ্রামে তিনি তার সমগ্র জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি নিপীড়িত, নির্যাতিত, বঞ্চিত ও শোষিত মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি আত্মনিভর্রশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা। বঙ্গবন্ধু মূলত একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন, তিনিই প্রথম পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের জন্য দুটি পৃথক অর্থনীতির রাজনৈতিক প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ তার এই রাজনৈতিক প্রস্তাবনার আলোকে বাস্তবে রূপ পরিগ্রহ করে স্বাধীন বাংলাদেশে রূপান্তরের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মযজ্ঞ সম্পাদন শেষে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হয়ে মূর্ত হয়েছে তারই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে।

জাতির পিতার উন্নয়ন দর্শন ও স্বপ্নের অব্যাহত অগ্রগতির ধারায় বাংলাদেশ ২০৩১ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে উচ্চ-আয়ের উন্নত দেশ হিসেবে রূপান্তরিত হবে যার পথনকশা অঙ্কিত হয়েছে রূপকল্প ২০৪১ দলিলে। ২০৪১-এর নিকটবর্তী সময়ে বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর চাওয়া স্বপ্নের সোনার বাংলা, যেখানে দারিদ্র্য থাকবে না, থাকবে না অভাব ও নিরক্ষরতা। সে সময়কার স্মার্ট বাংলাদেশের প্রধান চারটি কম্পোনেন্ট থাকবে- (ক)  স্মার্ট   সিটিজেন; (খ) স্মার্ট  সোসাইটি  ; (গ) স্মার্ট  ইকোনমি ও (ঘ) স্মার্ট   গভর্মেন্ট। ২০৪১ সালে স্বাধীনতার ৭০ বৎসর উদযাপনের উপলক্ষে আমরা রূপকল্প ২০৪১ এর সার্থক বাস্তবায়নে পাব একটি গতিশীল প্রযুক্তিনির্ভর প্রাগ্রসর স্মার্ট বাংলাদেশ যেখানে বিরাজ করবে: (ক) কাগজবিহীন অফিস (খ) নগদ অর্থ ছাড়া লেনদেনযুক্ত সমাজ এবং (গ) সিম ছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা. এসব সব উপাদান ও প্রত্যয়ের মৌল বিষয় হচ্ছে মানুষের উন্নয়ন এবং স্মার্ট     বাংলাদেশÑএর প্রধান কম্পোনেন্ট এটি।  বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ ও ‘সমবায় বাংলা’ বিনির্মাণে জনগণ তথা মানুষদের স্মার্ট জনগণে তথা মানবসম্পদে পরিণত করতে সমবায়কে কার্যকর অবস্থানে নিতে হবে। জাতীয় উন্নয়ন দর্শনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমবায়েরও সেøাগান হবে: ‘প্রযুক্তি প্রগতির পথ বলে গণ্য/ডিজিটাল বাংলাদেশ সবার জন্য’ এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন দৃশ্যমান/লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসিক্ত লক্ষ শহিদের আত্মত্যাগে প্রাপ্ত প্রিয় মাতৃভ‚মি বাংলাদেশকে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সুখি-সমৃদ্ধ-উন্নত ও জনগণকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রায়োগিক কর্মযজ্ঞ হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ উদ্যোগ। আর এই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ কর্মযজ্ঞের দ্যোতনায় সার্বিকভাবে আমরা ‘সমবায় বাংলা’ বলতে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারসম্পন্ন এমন একটি বাংলাদেশকে বুঝতে চাই যেখানে সমবায় দর্শন ও চেতনার আলোকে সম্মিলিত কর্মযজ্ঞে: জনগণের জীবন মান হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ; দেশ হবে সব ধরনের অপরাধমুক্ত; দেশ হবে সব ধরনের দুর্নীতিমুক্ত; দেশে কোনো অপশাসন থাকবে না; সঠিক লোক সঠিক জায়গায় অধিষ্ঠিত হবে; কর্মক্ষম কোনো হাত বেকার থাকবে না; দেশ একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হবে এবং দেশে থাকবে একটি জ্ঞানভিত্তিক সোসাইটি। এ ৮টি প্রকৃষ্ট নিয়ামক বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ ও ‘সমবায় বাংলা’ গড়ে উঠবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সারাজীবনের সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছিলেন বাংলাদেশের জনগণ ও তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নকে। তার বিভিন্ন ভাষণে আমরা সমবায়কে জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের হাতিয়ার করার কথা দেখতে পাই। এ ধরনের কতিপয় ভাষণে বঙ্গবন্ধু সমবায় দর্শনকে বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়ন নিরিখে আমরা বিশ্লেষণ করতে পারি: সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুর রেডিও-টিভি ভাষণ: ২৮ অক্টোবর ১৯৭০-এ ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সমবায়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্রাকৃতি শিল্প গড়ে তুলতে হবে।… বাজারজাতকরণের ও ঋণদানের সুবিধা করে দিতে হবে। শাসনতন্ত্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বক্তব্য: ১৯৭২ সালে জাতীয় সংসদে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘দেশের প্রতিটি অঞ্চলে বহুমুখী সমবায় প্রতিষ্ঠায় বিরাট পরিকল্পনা নিয়ে তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে;। জাতীয়করণ উপলক্ষে বেতার ও টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ: ২৬ মার্চ ১৯৭২ প্রদত্ত এ ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ছোট ছোট চাষিদের অবশ্যই উৎপাদনক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে। এ কথা মনে রেখে আমরা পল্লী এলাকায় সমবায় ব্যবস্থার ভিত্তিতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করতে চেষ্টা করছি’। দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণাকালে বক্তব্য: ২৬ মে ১৯৭৫ ভাষণে জাতির পিতা বলেন, ‘…আমার যুবক ভাইরা, আমি যে কো-অপারেটিভ করতে যাচ্ছি গ্রামে গ্রামে এর ওপর বাংলার মানুষের বাঁচা-মরা নির্ভর করবে। আপনাদের ফুলপ্যান্টটা একটু হাফপ্যান্ট করতে হবে। পায়জামা ছেড়ে একটু লুঙ্গি পরতে হবে। আর গ্রামে গ্রামে গিয়ে এই কো-অপারেটিভকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলার জন্য কাজ করে যেতে হবে। যুবক চাই, ছাত্র চাই, সবাইকে চাই’ এবং বঙ্গভবনে নবনিযুক্ত জেলা গভর্নরদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য: ২১ জুলাই ১৯৭৫ ভাষণে জাতির পিতা বলেন,‘ কো-অপারেটিভ ট্রেনিং সেন্টার করে সেখানে সবাইকে নিয়ে যান’।

জাতির পিতার উপরোক্ত সমবায় দর্শন ও নির্দেশনাকে পাথেয় করে সমবায় অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে করণীয়সমূহ হতে পারে: সমবায় সেক্টরে উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা ও পণ্য পৌঁছানো। সমবায়ীদের নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশেষায়িত পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে দক্ষ করে গড়ে তোলা। ‘আন্তঃসমবায় সহযোগিতার সমবায় মূলনীতির বাস্তবায়ন করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সমবায়ীদের অনলাইন প্লাটফর্মে এনে উৎপাতি পণ্য ও সেবার লিংকেজ গড়ে তোলা। নতুন নতুন ক্ষেত্রে (যেমন: গার্মেন্টস সেক্টর, প্রবাসীদের কর্মসংস্থানের জন্য পতিত জমিতে কৃষি উৎপাদন, স্কুল কো-অপারেটিভ, টুরিজুম কো-অপারেটিভ হেলথ কো-অপারেটিভ ইত্যাদি) সমবায়কে নতুন আঙিকে সম্প্রসারণ করে এর প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশ ঘটানো এবং সমবায় অধিদপ্তরের জনবলকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত করে স্মার্ট বাংলাদেশ-এর উপযোগী করে গড়ে তোলা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে সফল নেতৃত্বে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনায় এক ভুখণ্ড। মাটি ও মানুষের অসীম সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের মূল দর্শন নিহিত রয়েছে ‘সোনার বাংলা’ ও ‘সমবায় বাংলা’র মধ্যেই। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ ও ‘সমবায় বাংলা’র গন্তব্য সাধারণ জনগণের কর্মচাঞ্চল্যে আর সমবায় সে কর্মচাঞ্চল্যের একটি পরীক্ষিত মাধ্যম। জাতির পিতার সমবায় দর্শন ও বাংলাদেশের উন্নয়ন সারাংশও এখানেই নিহিত রয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

পিআইডি নিবন্ধ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০