Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 12:38 pm

সোনালী আঁশের শেয়ার  দর বেড়েই চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: সমাপ্ত হিসাববছরের পরিচালনা পর্ষদ সভায় লভ্যাংশ ঘোষণার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখলেও টানা দর বাড়ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সোনালী আঁশ লিমিটেডের শেয়ারের। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের আগামী সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ অবস্থায় সোনালী আঁশ কর্তৃপক্ষ শেয়ারহোল্ডারদের আদৌ কোনো লভ্যাংশ দেবে কি না, কিংবা কত দেবেÑএ নিয়ে সংশয় রয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, লভ্যাংশ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটি ঝুলিয়ে রাখার কারণে বিনিয়োগকারীরা ধরে নিয়েছেন, তারা লভ্যাংশ পাচ্ছেন। যে কারণে এর শেয়ারদর বাড়ছে। এ অবস্থায় কোম্পানিটি যদি কোনো লভ্যাংশ না দেয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন তারা।

উল্লেখ্য, গত জুনে সমাপ্ত সোনালী আঁশ লিমিটেডের হিসাববছরের পরিচালনা পর্ষদ সভা গত ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় নিয়মমাফিক শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদানের বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনাই করেনি পর্ষদ। এর পরিবর্তে পরিচালনা পর্ষদের আগামী সভায় লভ্যাংশ প্রদানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে কোম্পানির পক্ষ থেকে ডিএসই’র ওয়েবসাইটে জানানো হয়। এরপর প্রায় দুই সপ্তাহ শেষ হয়ে গেল লভ্যাংশ প্রদানের সিদ্ধান্তটি ঝুলছে। আর এ কারণেই শেয়ারদর টানা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে সোনালী আঁশের কোম্পানি সচিব মকসুদ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোনো কোম্পানির সব হিসাব প্রস্তুত থাকার পরই পর্ষদ সভার তারিখ নির্ধারণ করে। স্বাভাবিকভাবে ওইদিন সব ধরনের সিদ্ধান্ত সভায় অনুমোদন হয়। যদি কোনো কোম্পানি তা করতে না পারে, সেক্ষেত্রে পরবর্তী কোনো নির্ধারিত দিনে তা করবে। তবে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে শেয়ারদরে প্রভাব পড়ে।

বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা যায় এবং তাদের মধ্যে ওই কোম্পানি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। তাই সব কিছু সময়মতো অনুমোদন করাই ভালো।’

তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সোনালী আঁশের শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী। তবে পরিচালনা পর্ষদের সভার আগে দর নি¤œমুখী ছিল। গতকাল মঙ্গলবার কোম্পানির শেয়ারদর সর্বশেষ ২৪২ টাকা ৯০ পয়সা বেচাকেনা হয়েছে। এদিকে কোম্পানির শেয়ারদর ২৩১ টাকা থেকে ২৪২ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। এর আগে চলতি মাসে প্রথম সপ্তাহের শেষ দিকে কোম্পানির শেয়ার ২০৯ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের সভার পরদিন কোম্পানির শেয়ার ২১৮ টাকা ২০ পয়সা বেচাকেনা হয়েছে। অর্থাৎ ৯ কার্যদিবসে কোম্পানির দর বেড়েছে ২৪ টাকা ৭০ পয়সা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষের এ ধরনের আচরণে কোনো চক্র দর বাড়িয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন তারা। পাশাপাশি কোনো কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদের সভায় যাতে সব বিষয়েই পরিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় সেই বিষয়ে সংস্থার কঠোর হওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।

কোম্পানিটির লভ্যাংশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে প্রত্যেক সমাপ্ত বছরই কোম্পানির ১০ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানিটির প্রকৃত মুনাফার হার দাঁড়িয়েছে এক দশমিক শূন্য তিন শতাংশ, যা খুবই সামান্য।

পুঁজিবাজারে ১৯৮৫ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন দুই কোটি ৭১ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ২৭ লাখ ১২ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৫৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে পাঁচ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৮ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।