নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হলেও সামগ্রিক আর্থিক সূচকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনার পর থেকে ব্যাংকটি বড় ঋণ বিতরণে রক্ষণশীল ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে এসএমই, ট্রেজারি সার্ভিস ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত খাটানোর নীতিতে পরিচালিত হয়ে আসছে। এতে সুফলও মিলেছে। চলতি বছরে পরিচালন মুনাফা হয়েছে দুই হাজার ৫৮ কোটি টাকা। ব্যাংকের এ অর্জন ধরে রেখে সোনালী ব্যাংককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন্স (আইডিইবি) মিলনায়তনে গতকাল সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি হিসাববিদ হওয়ার সুবাদে একবার সোনালী ব্যাংকের অডিট করেছিলাম। আমি ব্যাংকের ভল্টে গিয়েও হিসাব করেছি মজুদ করা টাকার। ব্যাংকারদের বলব শাখা পর্যায়ে ব্যাংকের ভল্টে গিয়ে বছরে অন্তত একবার যাচাই করুন। অনেক নতুন কিছুই এতে বেরিয়ে আসবে। শুধু কাগজে-কলমে হিসাব না কষে সরেজমিনে যান। সোনালী ব্যাংক এগিয়ে যাচ্ছে, এটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, সুশাসন ব্যাংকের সংস্কৃতিতে পরিণত করতে হবে। এটি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে ব্যাংক এগিয়ে যাবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফজলে কবির বলেন, কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ বিতরণের মাধ্যমে শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখছে সোনালী ব্যাংক। ২০১৮ সালে ব্যাংকটি আর্থিক বিভিন্ন সূচকে উন্নতি লাভ করেছে। কিন্তু এখনও ব্যাংকটির শ্রেণিকৃত ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি, অবলোপন ও পুনঃতফসিলকৃত ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। খেলাপি হওয়া ঋণের ৯০ শতাংশই মন্দ ঋণ। এদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংককে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছে। ঋণ যাতে কোনো একক খাত বা ব্যবসায় কেন্দ্রীভূত হয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আসাদুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক খাতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে সোনালী ব্যাংককে, যাতে অন্যরা অনুকরণ করে। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় নিত্যনতুন প্রযুক্তি আসছে। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে না পারলে বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় পিছিয়ে পড়তে হবে।
সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল বলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনার পর বড় ঋণ বিতরণে সোনালী ব্যাংক রক্ষণশীল হয়। এ ভূমিকা না নিয়ে কী করার ছিল? এ জন্য আমরা ছোট ঋণে মনোনিবেশ করি বেশি। এতে ব্যাংক মুনাফায় ফিরে আসতে পেরেছে। সরকারি ৫১টি সেবা আমরা বিনা ফিতে দিই। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৯২ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানিতে আমাদের কমিশন ছিল পাঁচ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সরকার আমাদের দিয়েছে মাত্র ২০ কোটি টাকা।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, সোনালী ব্যাংক এগিয়ে যাচ্ছে সব পর্যায়ের ব্যাংকারদের প্রচেষ্টায়। নতুন প্রজন্ম যুক্ত হয়েছে ঋণ বিতরণ থেকে আদায় কার্যক্রমে। এ জন্য চলতি বছরকে অর্জন সুসংহত করার বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে মূলধন জোগানো ছাড়াই আমাদের মূলধন ঘাটতি কমে আসছে।
সম্মেলনে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান কার্যালয়সহ সারা দেশের ব্যাংকার, মহাব্যবস্থাপক ও শাখাপ্রধানরা অংশ নেন।

Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:46 am
সোনালী ব্যাংককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আহ্বান অর্থমন্ত্রীর
দিনের খবর,শেষ পাতা ♦ প্রকাশ: