শেয়ার বিজ ডেস্ক: এই প্রথম সোমালিয়া সরকার দেশটিতে দুটি বিদেশি ব্যাংককে শাখা খোলার অনুমতি দিয়েছে। গত রোববার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানায় আফ্রিকা নিউজ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাণিজ্য বাড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (সেন্ট্রাল ব্যাংক অব সোমালিয়া) বরাত দিয়ে আফ্রিকা নিউজ জানায়, মিসরের ব্যাংকুয়ে মিসর ও তুরস্কের জিরাত কাটিলিম সোমালিয়াম তাদের কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, কয়েক মাস ধরে বিদেশি ব্যাংক দুটির আবেদন পর্যালোচনা করা হয়। এরপর তাদের শাখা খোলা ও কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়।
মিসরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকুয়ে মিসর। ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১০২ বছর আগে ১৯২০ সালে। এর সদর দপ্তর রাজধানী কায়রোয়। এর শাখা ৫৯০টি। অন্যদিকে তুরস্কের জিরাত কাটিলিম তুলনামূলক নতুন ব্যাংক। বলা যায়, একেবারে নবীন এ ব্যাংকÑ তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ১২ মে। দেশের রাজস্ব বিভাগের অধীন ইসলামি শরিয়াহ্ভিত্তিক এ ব্যাংক। জিরাত ফাইন্যান্স গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এটি। গ্রুপটিতে রয়েছে তুরস্কের বৃহত্তম ব্যাংক জিরাত ব্যাংকাসি।
সোমালিয়ার আর্থিক খাতের উন্নয়নে এই ব্যাংক দুটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে এবং আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হবে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদিরহমান মোহামেদ আবদুল্লাহি।
বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ সোমালিয়া। দেশটির প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। তাদের দৈনিক আয় দুই ডলারের কম। দেশটিতে কয়েক দশক ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজছে তারা। দেড় কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। এর দু-একটি ‘হাওয়ালা’ নামে সেবার মাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থ লেনদেনে সহায়তা করে। বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আসার পথটি বেশ সহজ করেছে হাওয়ালা। এর মাধ্যমে বিদেশে বসবাসরত দেশটির প্রবাসী ও অভিবাসীরা সঙ্গে সঙ্গে দেশে অর্থ পাঠাতে পারেন। কিছু তথ্য দিয়ে তারা সহজে হাওয়ালা’র সেবা নিতে পারেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক সংকটের পর প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মাদের ক্ষমতা গ্রহণের ছয় সপ্তাহের মধ্যে বিদেশি ব্যাংকগুলোর লাইসেন্স দেয়ার ঘোষণা এলো। দেশটির নতুন প্রশাসনের সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হুমকি দুর্ভিক্ষ ও আল-শাবাব জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলা। প্রসঙ্গত, আল-শাবাব গোষ্ঠীটি আল-কায়েদা (একিউ) অনুমোদিত ও আরব অঞ্চলে একিউ-সহ অন্য একিউ সহযোগীদের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আল-শাবাব ছিল সাবেক সোমালি ইসলামিক আদালত পরিষদের জঙ্গি শাখা, যেটি ২০০৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধে দক্ষিণ সোমালিয়ার কিছু অংশ দখল করে। ২০০৬ সালের শেষ থেকে আল-শাবাব ও এর সংশ্লিষ্ট সামরিক বাহিনী গেরিলা যুদ্ধ ও সন্ত্রাসী ব্যবহার করে সোমালিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে কৌশল হিসেবে বিদ্রোহে লিপ্ত রয়েছে। এছাড়া আল-শাবাব সোমালিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা ও জিবুতিতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিয়ায় প্রায়ই অপহরণের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে জঙ্গি গোষ্ঠীটি। তাদের দমন করা বর্তমান প্রশাসনের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এসব সমস্যা মোকাবিলা করে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ও জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ।
খরার কারণে হর্ন অব আফ্রিকা, সোমালিয়ার ৭১ লাখের বেশি মানুষ (দেশটির প্রায় অর্ধেক নাগরিক) বর্তমানে অনাহারে ভুগছেন। তাদের মধ্যে দুই লাখ ১৩ হাজারের মানুষের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। এই মানুষরা মহাবিপর্যয়ে রয়েছেন এবং তাদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে এমনই উল্লেখ করা হয়েছে।