নিজস্ব প্রতিবেদক: ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে গাছ কাটা বন্ধে সরকারকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটার প্রতিবাদ ও আত্মপক্ষ সমর্থনে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় বক্তব্য দেয়ার মধ্যে গতকাল এ নোটিস পাঠানো হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংরক্ষণে আদালতের এক আদেশ স্মরণ করিয়ে দিয়ে নোটিসে বলা হয়েছে, গাছ কেটে রেস্তোরাঁ নির্মাণ বন্ধ না হলে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামিম আকতার ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মঞ্জুরুর রহমানকে ই-মেইলে নোটিসটি পাঠানো হয়েছে বলে মনজিল মোরসেদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে উদ্যান-সংক্রান্ত হাইকোর্টের একটি রায় দিয়েছিলেন। সে রায়ে বলা হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিছক একটি এলাকা নয়। এলাকাটি ঢাকা শহর পত্তনের সময় থেকে একটি বিশেষ এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এ এলাকার ঐতিহাসিক ও পরিবেশগত ঐতিহ্য আছে। শুধু তা-ই নয়, দেশের সব গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্র এ এলাকা। ফলে সম্পূর্ণ এলাকাটি একটি বিশেষ এলাকা হিসেবে সংরক্ষণের দাবি রাখে।
এ আইনজীবী বলেন, ‘গত ১১ বছর হাইকোর্টের ওই রায় বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পূর্ত মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা চেষ্টা করেছি। যখনই যোগাযোগ করেছি তখনই বলা হয়েছে, এ-সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, আসলে কী হচ্ছে গত ১১ বছরেও আমরা জানতে পারিনি। এমনকি সংবাদ মাধ্যমেও এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত কিছু আসেনি। ফলে মনে হচ্ছে আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করা হচ্ছে বা পাশ কাটানো হচ্ছে।’
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের (তৃতীয় পর্যায়) মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে রেস্তোরাঁ, হাঁটার পথ, গাড়ি রাখার স্থান নির্মাণে শতাধিক গাছ কাটা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তার প্রতিবাদে বুধবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানববন্ধন হলে মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘কিছু গাছ’ কাটা হলেও সেখানে আরও এক হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
রেসকোর্স ময়দানে একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান ও একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কেএম সফিউল্লাহ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন জনস্বার্থে ২০০৯ বছরের ২৫ জুন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন। এর এক বছর পর দেয়া রায়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাত্তর-পরবর্তী স্থাপনা, যেমনÑশিশু পার্ক, মহানগর পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, ফুলের মার্কেট সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। আদালত রায়ে এক বা একাধিক কমিটি গঠন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাতটি স্থান চিহ্নিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এগুলো হলোÑ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দেয়া ভাষণের স্থান, ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান, একাত্তর সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদে নির্বাচিত সদস্যদের শপথের স্থান, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্থান, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান ও ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণের স্থান।
এ সাতটি স্থান ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সব ধরনের স্থাপনা অপসারণ করতে বলা হয়েছিল রায়ে। গত বছর এ-সংক্রান্ত আরেকটি রিট আবেদনে শুনানিতে এ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে এ রায়ের আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছিল। পরে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দেন আদালতে। সেসব প্রতিবেদন দেখে গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেছিল, গত ১০ বছরে অন্য কোথাও শিশু পার্ক সরাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। ঢাকায় শিশুদের খোলার জায়গা নেই।