সৌদিতে লক্ষ্মীপুরের যুবকের লাশ উদ্ধার

প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর : সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের নিকটতম আল হারমোলিয়াহ এলাকার একটি ছাগলের খামারে প্রবাসী বাংলাদেশি আবদুর রহমানের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে সৌদি পুলিশ। আবদুর রহমান লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরলরেঞ্চ ইউনিয়নের উত্তর চরলরেঞ্চ গ্রামের হানিফের ছেলে। আজ বুধবার বিকালে আবদুর রহমানের বাবা হানিফ ও ভাই আবুল কাশেম তথ্যটি নিশ্চিত করেন। এর আগে ১ মে সৌদি আরবের পুলিশ তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করলেও পরিবার সে খবর জানতে পারেনি।

এদিকে মৃত্যুর চার মাস পার হলেও লাশ ফেরত ও হত্যার বিচার না পেয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে।

সৌদি আরবে অবস্থানরত স্বজনদের বরাত দিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানান, আবদুর রহমানকে খুন করে তার লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়িচাপায় মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে সেখানকার মালিকপক্ষ। তবে উক্ত ঘটনায় পুলিশ এক সৌদি নাগরিক ও এক সুদানি নাগরিককে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দিয়েছে বলেও জানায় নিহতের পরিবার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছেলেকে হারিয়ে এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন বাবা-মা। অন্যদিকে ছেলের লাশ দেশে আনতে আহাজারি করছে অসহায় পরিবার।

নিহতের মা লাকী বেগম জানান, সৌদি আরবে ঈদের আগের দিন বিকালে ছেলের সাথে তার শেষ কথা হচ্ছিল। কথা বলার এক ফাঁকে হঠাৎ করে আবদুর রহমান চিৎকার দিয়ে বলে উঠে মা আজরাইল আসে। এ কথা বলেই ফোন কেটে দেয়। এরপর এদিক থেকে বারবার ফোন দিয়েও আর তাকে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বাড়ি থেকে পরপর দুদিন তার ফোনে যোগাযোগ করে যখন কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি, তখন ঘটনাটি তিনি তার মেয়ের জামাই সৌদি প্রবাসী ইউছুফকে জানান। পরে ইউছুফ আল হারমোলিয়াহ এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আবদুর রহমানের সাথে তার সুদানি এক সহকর্মীর ঝগড়া হয়েছিল। ঝগড়ার একদিন পর রহমানের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়।

ইউছুফকে সেখানকার স্থানীয়রা জানান, আবদুর রহমানকে খুন করা হয়েছে। পরে ইউছুফ স্থানীয় হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তার লাশ দেখে আসে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের দিকে স্থানীয় এক আত্মীয়র মাধ্যমে ভালো চাকরির আশায় সৌদি আরব পাড়ি দেন আবদুর রহমান। কিন্তু সৌদি গিয়ে জানতে পারেন তার চাকরি মরুভূমিতে উট চরানো। এ কাজ করা তার পক্ষে মোটেও সম্ভব ছিল না। তবুও বহু কষ্টে তিনি দুবছর কাটিয়েছেন। করোনার সময়ও তার কোনো ছুটি ছিল না। এর মাঝে কারণে-অকারণে মালিকপক্ষ তাকে মারধর করত। পরে অতিনির্যাতনে তিনি সেখান থেকে একদিন পালিয়ে অন্যত্র চলে যান। যুক্ত হন নতুন আরেকটি কাজে। কিন্তু এখানে গিয়েও তিনি জানতে পারেন তার কাজ মরুভূমিতে ছাগলের খামারে কাজ করা। নতুন কর্মক্ষেত্রে সুদানি সহকর্মীদের সাথে তার প্রায়ই ঝগড়া হতো। পরে ১ মে রক্তাক্ত অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।
বিদেশে অবস্থানরত স্বজনদের বরাত দিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানান, সুদানি কোনো এক সহকর্মী এবং মালিকের এক আত্মীয় রহমানকে খুন করে গাড়িচাপায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে মিথ্যা প্রচার করে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রহমানের লাশের মাথার পেছনে জখম রয়েছে। শরীরের বাকি অংশগুলো অক্ষত।

কমলনগর থানার অফিসাস ইনচার্জ সোলাইমান জানান, এ বিষয়ে কেউ জানায়নি। এখন নিহতের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, খোঁজ নিয়ে লাশ দেশে আনার বিষয়ে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারকে সহায়তা করার চেষ্টা করব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০