সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে ধুনটে তৈরি টুপি 

আলমগীর হোসেন, বগুড়া: বগুড়ার ধুনট উপজেলায় তৈরি টুপি যাচ্ছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। উপজেলার গৃহিনী ও স্কুল-কলেজপড়ুয়া মেয়েরা এসব টুপি তৈরি করেন। আর টুপির কাজ করে সহস্রাধিক পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছে।

উপজেলার প্রায় ৭৫ হাজার নারী টুপি সেলাইয়ে যুক্ত। গ্রামের মহিলাদের টুপি সেলাইয়ের কাজে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় সুতা ও ক্রুসকাটা। সুতা ও ক্রুসকাটা পাইকাররা সরবরাহ করে থাকে। পাইকাররা ২৫ টাকায় ক্রুসকাটা এবং ৫০ থেকে ১০০ টাকার সুতা সরবরাহ করে। কারও টাকা না থাকলেও বাকিতেও দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে টুপি ক্রয় করার সময় ক্রুসকাটা ও সুতার দাম কেটে রাখে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এসব টুপি রাজধানীর চকবাজার, বাইতুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে সরবরাহ করেন। সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রেও রফতানি হয়। সারা বছরের তুলনায় ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় টুপির চাহিদা বেশি থাকে।

চৌকিবাড়ি গ্রামের গৃহবধূ মোমেনা খাতুন জানান, স্বামীর সামান্য রোজগার দিয়ে তাদের খুব কষ্টে দিন যাচ্ছিল। কিন্তু ৫ থেকে ৬ বছর আগে টুপি তৈরি শুরুর পর থেকে আর কষ্ট করতে হচ্ছে না। টুপি বিক্রিতে হাটবাজারে যেতে হয় না। বাড়িতেই পাইকারারা প্রতি সপ্তাহে এসে টুপি কিনে নিয়ে যায়। সব খরচ বাদে প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা আয় হয়। ওই গ্রামের রাশেদা খাতুন জানান, অভাবের সংসারে কোনো কোনো দিন পাঁচ টাকাও হাতে থাকতো না। কিন্তু টুপি সেলাই শুরুর পর থেকে আর কারও কাছে হাত পাততে হয় না। তিনি প্রতি মাসে প্রায় তিন হাজার টাকা আয় করেন। মোমেনা ও রাশেদা খাতুনের মতো ওই গ্রামের গৃহবধূ লাকি, সনি, কুলসুম, রানু, পারুলসহ অনেকে টুপি সেলাই করে এখন স্বাবলম্বী। চৌকিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাথি খাতুন প্রতি মাসে ৩০টি টুপি সেলাই করে সংসারে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজগার করছে। লেখাপড়ার খরচ বাবা-মার কাছ থেকে নিতে হয় না। ধেরুয়াহাটি গ্রামের নিবারন চন্দ্রের মেয়ে রত্না রায় টুপি সেলাইয়ের টাকা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন।

চালাপাড়া গ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া জানান, প্রতি সপ্তাহে গ্রামে গ্রামে সুতা ও ক্রুসকাটা সরবরাহ করতে হয়। পরের সপ্তাহে সেলাই করা টুপি কিনে আনেন। প্রতিটি টুপির দাম প্রকারভেদে ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত হয়। আগে শুধু এক ডিজাইনের টুপি তৈরি হতো। এখন সময়ের সঙ্গে তালো মিলিয়ে টুপিরও বাহারি নাম ও ডিজাইন দেওয়া হয়েছে।

টুপি তৈরির সঙ্গে জড়িত ধুনট ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ফর পুওর পিপলস (ডিসিপি) নামের একটি বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এনামুল বারী সরকার জানান, পাইকারদের তুলনায় আমরা কমদামে ভালো সুতা সরবরাহ করি এবং বেশি দামে টুপি কিনে থাকি। বিভিন্ন ডিজাইনের টুপিসহ কারুশিল্প বিষয়ে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এ উপজেলার সহস াধিক পরিবারের লোকজন টুপি তৈরির কাজ করে স্বচ্ছল হয়েছে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০