শেয়ার বিজ ডেস্ক: সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগির নিখোঁজ ইস্যুতে দেশটিতে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন বর্জন করার কথা ভাবছে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে ওই সম্মেলন থেকে কয়েকজন শীর্ষ ব্যবসায়ী ও মিডিয়া গ্রুপ তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্স।
২ অক্টোবর ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ঢোকেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। কিন্তু তিনি সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তুরস্ক।
খাসোগির ঘটনায় সৌদি আরবের ওপর আন্তর্জাতিক মহল ক্ষুব্ধ। আগামী ২৩ অক্টোবর রিয়াদে তিন দিনব্যাপী ‘দাভোস ইন ডেজার্ট’ সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম দিকে বিশ্বের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো এ নিয়ে আগ্রহ দেখালেও খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর তাদের আগ্রহে ছেদ পড়ে। অনেকেই সাফ জানিয়ে দিয়েছে, খাসোগির অন্তর্ধানের পর তারা আর সৌদি আরবে অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনে যাচ্ছে না। কূটনৈতিক সূত্র বার্তা সংস্থা বিবিসিকে জানিয়েছে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন এবং ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়াম ফক্স এ সম্মেলনে অংশ নাও নিতে পারেন।
সৌদি প্রিন্স মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার জামাতার ঘনিষ্ঠ হলেও শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র যদি এ সম্মেলন বয়কট করে তাহলে সেটিকে তিরস্কার হিসেবেই ধরে নেওয়া হবে। আরেক মিত্রদেশ ব্রিটেনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে কঠিন ভাষায় তিরস্কার করা হয়েছে। এর আগে শিডিউল জটিলতা দেখিয়ে ওই সম্মেলনে না যাওয়ার ঘোষণা দেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট।
মূলত মোহাম্মদ বিন সালমান তার সংস্কার কর্মসূচিকে সামনে তুলে ধরতে এবং পশ্চিমা দুনিয়ায় নিজের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়তে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত স্টিভেন মুচিন ও লিয়াম ফক্স সম্মেলনে অংশ না নিলে তাদের অনুপস্থিতি দুই মিত্র দেশের পক্ষ থেকে তিরস্কার হিসেবেই প্রতীয়মান হবে।
খাসোগির অন্তর্ধান নিয়ে সৌদি আরবের কাছে জরুরি জবাব চেয়েছে ব্রিটেন। এরই মধ্যে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়েরকে ফোন করে এ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। সৌদি কর্তৃপক্ষকে হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বন্ধুত্ব সমান মূল্যবোধের ওপর নির্ভর করে।’
খাসোগির অন্তর্ধান বা হত্যাকাণ্ড নিয়ে যখন মোটাদাগে অভিযোগের তীর সৌদি আরবের দিকে, ঠিক সেই মুহূর্তে এমন অভিযোগকে মিথ্যাচার হিসেবে আখ্যায়িত করেছে রিয়াদ। দেশটি বলছে, খাসোগি সেদিন কনস্যুলেট থেকে বেরিয়ে গেছেন। প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরবের কাছে এর প্রমাণ চান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। সে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয় রিয়াদ। এমনকি কনস্যুলেটের সিসিটিভি ফুটেজও সরিয়ে ফেলে সৌদি আরব। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অব্যাহত সমালোচনায় চাপের মুখে পড়ে রিয়াদ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ ইস্যুতে চুপ থাকতে পারেননি ট্রাম্পও। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে খুন করেছে, এমনটা প্রমাণিত হলে দেশটিকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।’ ট্রাম্প মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি স্থগিত করলে রাশিয়া ও চীন এর সুযোগ নিতে পারে। তাই দেশটিকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে ভিন্ন পথে হাঁটতে চান তিনি।
ফ্রান্সের পক্ষ থেকেও এ ঘটনায় সৌদি আরবের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেন, সৌদি আরবের সরকারবিরোধী সাংবাদিক জামাল খাসোগির নিখোঁজ হয়ে যাওয়া একটি বিপজ্জনক ঘটনা। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে।
প্রভাবশালী দেশগুলোর পাশাপাশি খ্যাতিমান ব্যবসায়ী ও তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোও খাসোগির অন্তর্ধান নিয়ে সৌদি আরবের ওপর ক্ষুব্ধ। ফলে রিয়াদে অনুষ্ঠেয় বিনিয়োগ সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মূলধারার অনেক সংবাদমাধ্যম ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।