শেয়ার বিজ ডেস্ক: সৌদি আরবের এনভায়রনমেন্ট, ওয়াটার অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার মন্ত্রণালয় (এমইডব্লিএ) অরগানিক পোলট্রি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিনিয়োগে গুরুত্ব দিচ্ছে। এজন্য বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ এবং এই খাতে ২০৩০ সালের মধ্যে বর্তমানের তুলনায় পাঁচ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। খবর: আরব নিউজ।
দীর্ঘদিন ধরে তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে সৌদি আরব। অর্থনীতি বহুমুখী করার জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, বিনোদন ও পর্যটনকে বেছে নিয়েছে দেশটি। এজন্য ভিশন-২০৩০ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। পোলট্রিশিল্পকেও এই সময়ের মধ্যে স্বনির্ভর করে তুলতে চায় কর্তৃপক্ষ। অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করে তুলতে ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি।
মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি আহমেদ বিন সালেহ আল-আয়াদার মতে, এই উদ্যোগের আওতায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনা দেয়া হবে। এছাড়া তাদের জন্য অল্পদামে জমি দেয়া হবে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় আল-আয়াদা বলেন, উদ্যোগের মূল লক্ষ্য স্থানীয় পোলট্রি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এতে সৌদি গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্রাকটিসেসকে (জিএপি) যুক্ত করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে পোলট্রি খাতে অরগানিক উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যথাযথ অর্থায়ন করা হবে। একই সঙ্গে সব ধরনের কারিগরি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে আল-আয়াদার মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় গত জুলাইয়ে এই খাতের উন্নয়নের জন্য ১৭ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল (৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন বা ৪৫৩ কোটি ডলার) বিনিয়োগ করেছে। মূলত আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে পোলট্রি খাতে ৮০ শতাংশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য এই বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে।
দেশটির স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২২ সালে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৩৮ শতাংশ অবদান রাখে কৃষি খাত। সে সময় ১০০ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল (২৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ২৬০ কোটি ডলার) আয় আসে কৃষি খাত থেকে, ২০২১ সালে যা ছিল ৭২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন রিয়াল।
দেশটির ২০৩০ সালের জাতীয় কৃষি কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই উল্লম্ফন দেখা গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই কৃষি কৌশলের অন্যতম লক্ষ্য একটি টেকসই খাত সৃষ্টি করা, যেখানে খাদ্য ও পানির নিরাপত্তা থাকবে এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন হবে।
কৌশলের আওতায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যাতে প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় এবং কৃষি খাতের উৎপাদন উন্নত করা যায়। এজন্য সমবায়, বেসরকারি খাত এবং গবেষণা কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা হচ্ছে।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সৌদি আরব প্রাকৃতিক এবং পরিবেশগত সম্পদ সংরক্ষণের জন্য টেকসই কৃষি উন্নয়ন পানি ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য বেশি কয়েকটি কৌশল, উদ্যোগ এবং কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালে সৌদি ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি (এসএফডিএ) দেশটির পোলট্রি খাতের উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নেয়, যাতে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনা যায়। একই সঙ্গে স্থানীয় পোলট্রি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে উৎসাহ দেয়।
পোলট্রির পাশাপাশি মৎস্যচাষে আঞ্চলিক কেন্দ্রে পরিণত হয়ে চায় সৌদি আরব। সরকার এরই মধ্যে এ খাতের গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ করেছে, যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সৌদি অর্থনীতি ভূমিকা রাখতে পারে। মৎস্য খাতের উন্নয়নে সৌদি সরকার দেশটির বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করছে যেন উৎপাদন খরচ কমে যায় এবং রপ্তানি করা যায়। উপসাগরীয় অঞ্চলে ৪৯ শতাংশ অ্যাকুয়াকালচার পণ্যের জোগানদাতা সৌদি আরব। তাই এ খাতের উন্নয়নে দেশটি ভূমিকা রাখতে পারে।