Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:33 pm

সৌরবিদ্যুতে অনিয়ম দূর করার উদ্যোগ নিন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানির মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে আমাদের। প্রাকৃতিক গ্যাস ছাড়া মানুষের জীবনধারণ একপ্রকার অচল। চাইলেই এর বিকল্প তৈরি করা সম্ভব নয়। তাই নিঃশেষ হওয়ার ক্ষণ পর্যন্ত সময় ক্ষেপণ করার সুযোগ নেই।

তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পরিবেশবান্ধব এ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হলো সর্বোত্তম বিকল্প। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বিশাল এলাকা অধিগ্রহণের প্রয়োজন নেই। পতিত অকৃষি জমি, দখল হয়ে যাওয়া নদীর পাড় এবং ঘরের চাল বা ছাদে সোলার প্যানেল আর বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলবর্তী ও অগভীর সমুদ্র এলাকা বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য খুবই উপযোগী। উল্লেখ্য, সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ দিয়েই একসময় জার্মানি ইউরোপে শীর্ষ বিদ্যুৎ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়। ভারতের অন্যতম ব্যস্ত কোচিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুরোটাই চলছে সৌরবিদ্যুতে। সৌরবিদ্যুৎ কেবল গৃহস্থালি কাজেই ব্যবহারোপযোগী, তা নয়। সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এখন জাতীয় সঞ্চালন লাইনে যোগ হয় বিভিন্ন দেশে।

সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে বিশাল এলাকা অধিগ্রহণের প্রয়োজন নেই। পতিত অকৃষি জমি, দখল হয়ে যাওয়া নদীর পাড় এবং ঘরের চালে স্থাপন করা যায় বলে এটি সাশ্রয়ী। কিন্তু গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদন পড়ে মনে হলো এটি আর সাশ্রয়ী নয়, পরিবেশ ও জনবান্ধব নয়।  বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের ভূমির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে ফসলি জমি কমছে, তাতে ভূমির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে আমাদের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বিরদ্ধে নানা অভিযোগÑসৌরবিদ্যুতে অতিরিক্ত ট্যারিফ বা উচ্চ দাম, প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ, জোরপূর্বক জমি অধিগ্রহণসহ তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ এবং নদীর জায়গা দখল করে রাস্তা নির্মাণের প্রবণতা।

বুধবার ‘জ্বালানি রূপান্তরে সুবিচার চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্যে এই অভিযোগ তুলে ধরেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব। সংগঠনটি পাবনা, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটের তিনটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প পর্যবেক্ষণ শেষে এই অভিযোগগুলো উত্থাপন করেছে। ক্যাব বলছে, পাবনার হেমায়েতপুরে ৪০০ একর জমিতে প্যারামাউন্ট গ্রুপের একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র অবস্থিত, যেখানে মোট জমির ২৫ শতাংশ সরকারি খাসজমি। আর জমি কেনার আগেই জোর করে জমি দখল নিয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পাহারায় বসানো হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও ৩০ শতাংশ জমির মালিক ক্ষতিপূরণ পাননি। এ কেন্দ্রটির ট্যারিফ ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৯০ ইউএস সেন্ট বা ১৩ টাকা ৯ পয়সা। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ৬০০ একর জমিতে ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তিস্তা সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করেছে বেক্সিমকো লিমিটেড। সেখানে বিদ্যুতের ট্যারিফ ১৫ সেন্ট বা ১৬ টাকা ৬০ পয়সা। এ প্রকল্পে ধ্বংস করা হয়েছে তিন ফসলি জমি। ভুয়া মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করা হয়েছে কৃষকদের। বর্গাচাষি ও দিনমজুররা কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। লালমনিরহাটে কালীগঞ্জে ১২০ একর জমির ওপর সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে ইন্ট্রোকো পাওয়ার লিমিটেড, প্রকল্প দখল করেছে ৩০০ একর জমি। একই সঙ্গে তিস্তা নদীর দুই কিলোমিটার ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক। নদীর ধারে রাস্তা নির্মাণ করায় আশপাশের এলাকায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। প্রকল্পটি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে হওয়ায় বিদ্যালয়ের পরিবেশেও প্রভাব পড়েছে। এছাড়া বিদ্যুতের ট্যারিফ ধরা হয়েছে ১৬ সেন্ট বা ১৭ টাকা ৬০ পয়সা।

ক্যাব বলছে, দেশে সৌরবিদ্যুৎ উন্নয়নে ৪৬১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১০টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রয়েছে। আর অনুমোদিত ২৮টি কেন্দ্রের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি হয়েছে। এগুলোর মোট উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৫৭৯ মেগাওয়াট। আর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ছয় হাজার ৯৫৬ মেগাওয়াটের ৫৭টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র।

ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন, কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নাম করে বিদ্যুৎ খাতকে ঝুঁকিতে ফেলেছে, তারাই আবার সৌরবিদ্যুতের জন্য নেমেছে।’

সৌরবিদ্যুতের দাম পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় ছয় থেকে আটগুণ বেশি। সাধারণ মানুষ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না। সৌরবিদ্যুতে যে অন্যায়, অবিচার চলছে, তা বন্ধ করা উচিত। শুরুতেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা গেলে সৌরবিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ন্যায্যতার সংস্কৃতি চালু হবে। নইলে ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো সুযোগসন্ধানী ও স্বার্থান্ধ ব্যবসায়ীদের দ্বারা নতুন করে সমস্যায় পড়বে দেশ ও দেশের মানুষ।