সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিশ্বব্যাপী সৌরবিদ্যুৎ গুরুত্ব পাচ্ছে। গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানির মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে আমাদের। তুলনামূলক কম বিনিয়োগে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানি হলো সর্বোত্তম বিকল্প। সাশ্রয়ী ও অফুরন্ত সম্ভাবনা থাকায় বিশ্বব্যাপী বাড়ছে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিত্র খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয় বলেই প্রতীয়মান। অথচ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা কম দীর্ঘ নয়। আশির দশকের মাঝামাঝি সিলেটে প্রথম সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনে বেসরকারি উদ্যোগ সহায়ক ভূমিকা রাখে। পরবর্তী সময়ে সরকারি উদ্যোগে গঠিত হয় ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)। সংস্থাটির মাধ্যমে সোলার হোম সিস্টেম (এসএইচএস) কর্মসূচি গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে।
সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বিশাল এলাকা অধিগ্রহণের প্রয়োজন নেই। পতিত অকৃষি জমি, দখল হয়ে যাওয়া নদীর পাড় এবং ঘরের চাল বা ছাদে সোলার প্যানেল আর বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলবর্তী ও অগভীর সমুদ্র এলাকা বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য খুবই উপযোগী। অথচ গতকাল শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদন ‘সৌরবিদ্যুতে ডলার ও জমি দখলের প্রতিযোগিতা’ শীর্ষক প্রতিবেদন যুগপৎ হতাশা ও বিস্ময়ের। প্রতিবেদন পড়ে জানা গেল আমাদের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী তো নয়ই বরং অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা। যেমনÑ রেন্টাল-কুইক রেন্টালের মতোই সৌরবিদ্যুৎ কেনায় চুক্তি করা হয়েছে ডলারে। ডলারের বিনিময় হার বাড়তে থাকায় সৌরবিদ্যুৎ কেনার ব্যয় প্রতি বছর বাড়ছে। ২০২১-২২ অর্থবছর দেশে প্রতি ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় ব্যয় ছিল ১২ টাকা ৮৫ পয়সা; ২০২২-২৩ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ টাকা ৭৭ পয়সা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছর ১৬ টাকা ৫৯ পয়সা।
ভারতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ৫.৩ সেন্ট, পাকিস্তানে ৩.২ সেন্ট অথচ বাংলাদেশে ১৫.৫ সেন্ট।
সৌরবিদ্যুৎ কেবল গৃহস্থালির মতো ছোট কাজে ব্যবহারোপযোগী, তা নয়। সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এখন জাতীয় সঞ্চালন লাইনে যোগ হবে। সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ দিয়েই একসময় জার্মানি ইউরোপে শীর্ষ বিদ্যুৎ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়। ভারতের অন্যতম ব্যস্ত কোচিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুরোটাই চলছে সৌরবিদ্যুতে। উৎপাদন ব্যয় বেশি হলে সৌরবিদ্যুতে ঝুঁকত না দেশটি।
সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সর্বব্যাপী উদ্যোগ আর রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। কেবল মুনাফা নয়, কীভাবে সাধারণ মানুষের কাছে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুফল পৌঁছায়; তা নিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের ব্যবসায়ীরা সৌরবিদ্যুতে ডলার ও জমি দখলের প্রতিযোগিতায় মেতেছেন। কেন ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের মতো উচ্চ ব্যয়ে ও ডলারে চুক্তি করা হবে সৌরবিদ্যুৎ কেনায়। কার যোগসাজশে রাষ্ট্রের ক্ষতি হলেও ফুলে-ফেঁপে উঠছে কোম্পানি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদা মেটাতে উন্নত দেশগুলো কোন উপায়ে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে, সেটিও পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিবেচনায় বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। সরকারের উচিত, প্রতিটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি সংশোধনে উদ্যোগ নেয়া।