Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:11 pm

সৌরবিদ্যুৎ বাড়াতে আইএসএ’র সহযোগিতা নিচ্ছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে সৌরশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্সের সঙ্গে অংশীদারিত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এ চুক্তির আওতায় আইএসএ বাংলাদেশে ২০৩০ সালের জন্য একটি সোলার রোডম্যাপ তৈরি করাসহ সৌরবিদ্যুতের বিভিন্ন পরীক্ষামূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। সেগুলো সফল হলে সৌরপ্রযুক্তির প্রসারে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ পাওয়া সহজ হবে।

গতকাল রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান ও আইএসএ’র মহাপরিচালক অজয় মাথুর এ কান্ট্রি পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্টে (সিপিএ) সই করেন।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সৌরবিদ্যুতের প্রসার ঘটানোর জন্য টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা স্রেডা গঠন করা হয়েছে। এ খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিতে গঠন করা হয়েছে ইডকল।

সরকারের জ্বালানি মহাপরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্লিন এনার্জি বা পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ২০৩০ সাল নাগাদ সৌরশক্তি থেকে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এর বাস্তবায়ন হয়েছে খুবই সামান্য। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশে এখন সৌরশক্তি থেকে পাওয়া বিদ্যুতের মোট পরিমাণ এক হাজার মেগাওয়াটের কম, যদিও মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।

ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সৌর প্রকল্পগুলো থেকে দ্রুত সাফল্য পেতে প্রয়োজন প্রযুক্তি ও অর্থায়ন। নবায়ণযোগ্য ও ক্লিন জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। সোলার রুফটপ বা ভাসমান সোলার প্রকল্পের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। রোডম্যাপ অনুসারে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।

চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইএসএ’র সহযোগিতায় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো গতি পাবে আশা করছি। পাইলট প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়েই সাফল্যের মুখ দেখবে। রুফটপ সোলারকে উৎসাহিত করতে নেট মিটারিং গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কৃষিতেও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের উদ্যোগ বাড়ানো হচ্ছে।

২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে এক পার্শ্বসভায় ভারত ও ফ্রান্সের নেতাদের উদ্যোগে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। পরের বছর বাংলাদেশ এ প্ল্যাটফর্মের সদস্য হয়। বর্তমানে ১১০টি দেশ এ সংগঠনের সদস্য।

অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তরে আইএসএ’র মহাপরিচালক অজয় মাথুর বলেন, আইএসএ সৌরশক্তির প্রসারে অর্থায়নের কোনো কর্মসূচিতে থাকছে না। বরং বিভিন্ন কারিগরি পরামর্শ ও কর্মপরিকল্পনা সাজিয়ে দিয়ে সদস্য দেশগুলোকে সৌরশক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রস্তুত করছে। প্রয়োজনে এডিবিসহ আন্তর্জাতিক অন্য অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সহজে ঋণ পেতে সহায়তাও করছে।

চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের জন্য একটি সোলার রোডম্যাপ করে দেবে আইএসএ। এছাড়া বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রিকে দুই কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি ট্রলি মাউন্টেড সোলার ইরিগেশন সিস্টেম ও দুই কিলোওয়াট ক্ষমতার ১২টি পোর্টেবল সোলার প্যাডি থ্রাশার স্থাপন করে দেবে।

এছাড়া দেড় কিলোওয়াট ক্ষমতার সোলার ড্রিংকিং ওয়াটার প্ল্যান্ট, ২২ কিলোওয়াট ক্ষমতার দুটি রুফটপ সোলার স্থাপন এবং যে কোনো একটি রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে রুফটপ সোলার প্রকল্প স্থাপন, ফ্লোটিং সোলার প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি এবং ফ্লোটিং সোলার প্রকল্প স্থাপনে সহায়তা করবে আইএসএ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন দুটি ম্যানুয়াল সøুইস গেটকে ফ্লোটিং সোলারের মাধ্যমে অটো সøুইস গেটে রূপান্তর, প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে এ অ্যালায়েন্স।

বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে দিনব্যাপী কর্মশালায় পানিসম্পদ সচিব নাজমুল আহসান, স্রেডার চেয়ারম্যান মুনিরা সুলতানা, এডিবির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর জিয়াংবো নিং ও বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব নিরোদ চন্দ্র মণ্ডল বক্তব্য দেন।