শেয়ার বিজ ডেস্ক: সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দুই বা তার বেশি ফসল হয় এমন কোনো জমিতে সৌরবিদ্যুৎ বা অন্য কোনো স্থাপনা তৈরি করা যাবে না। তাই পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ল্যান্ডকোর জমি ক্রয় ও সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের পরিকল্পনা পুরোপুরি বেআইনি। গত রোববার উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) ও বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোটের (বিডাব্লিউজিইডি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তেঁতুলিয়ার দেবনগর ইউনিয়নের শেখগছ, ভূতজোত ও পাঠানপাড়া গ্রামে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে ল্যান্ডকো ও গ্রামবাসীর মধ্যে ঘটিত দ্বন্দ্বের তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন দৈনিক কালের কণ্ঠের খুলনা ব্যুরোপ্রধান গৌরাঙ্গ নন্দী। তথ্য অনুসন্ধান কমিটির সদস্য বেগম রোকেযা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানজিউল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক বায়েজিদ খান, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ শহিদুল ইসলাম, উজ্জ্বল কুমার চক্রবর্তী, সাংবাদিক লাবনী ইয়াসমিন লুনি ও শহিদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এক উদ্দেশ্যে জমি ক্রয় করে অন্য উদ্দেশ্য ব্যবহারের পাঁয়তারা করা, প্রতিষ্ঠানের নামে জমি ক্রয় করার কথা বলে ব্যক্তি নামে রেজিস্ট্রি করা, অল্প জমি ক্রয় করে বেশি জমি দখল করা, হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন, কৃষকদের মিথ্যা মামালা দিয়ে এলাকা ছাড়া করা এবং জেলে পাঠানো। এলাকার যুবক ছেলেদের দৈনিক মজুরির বিনিময়ে দল গঠন করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা। ফসলি কৃষি জমিতে কোনো স্থাপনা না-করার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্তা না-করে জোর পূর্বক কৃষকদের জমি দখল ও উচ্ছেদের মাধ্যমে মানবাধিবার লঙ্ঘন করা। ল্যান্ডকো নামের কোম্পানীর নাম ব্যবহার করা হলেও বাস্তবিক পক্ষে উক্ত নামে কোনো কোম্পানিী বাংলাদেশে নেই, কোম্পানির নাম ব্যবহার করা হলেও আসলে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সহায়কের ভূমিকা রাখেন ক্লিনের প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। তিনি বলেন, উল্লিখিত বিষয়টি পত্রপত্রিকার মাধ্যমে দৃষ্টি গোচর হলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মীদের সমন্বয়ে একটি
তথ্য অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়, যারা চলতি বছর ১৭ থেকে ১৯ মার্চ সরেজমিন তদন্ত করেন। সেই তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী অ্যাসোসিয়েশনের (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন বলেন, সরকারের যে ঘোষিত অবস্থান আছে, দুই বা ততোধিক ফসলি জমিতে কোনো উন্নয়ন স্থাপনার কাজ হবে না উল্লিখিত দ্বন্দ্বের নিরসনের জন্য যে কমিটি গঠিত হয়েছে, সেই কমিটি নতুনভাবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে করা উচিত যেখানে সুশীল সমাজের লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। জেলা প্রশাসকের কাছে ভুক্তভোগীদের একটা আপিল করতে হবে।
বক্তারা তাদের আলোচনায় বলেন, সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে ২০১৭ সাল থেকে করতোয়া সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ল্যান্ডকো নামে দুটি প্রতিষ্ঠান শেখগছ গ্রামে ২৭৬ একর জমি ক্রয় শুরু করে। কিন্তু অফিশিয়ালি জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ২০২১ সালের আগস্টে তারা করোতোয়া সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে ১৫০ একর অকৃষি জমি এক বছরের মধ্যে ক্রয়ের অনুমোদন পায়। কিন্তু তারা এক বছরের মধ্যে উক্ত পরিমাণ জমি ক্রয় করতে ব্যর্থ হয় এবং ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ফসলি কৃষি জমি ক্রয় করা শুরু করে। তা হলো মৌসুমি কৃষি খামার নামে কয়েকটি সাইন বোর্ড টানিয়ে দিয়ে কৃষি খামার করবে বলে প্রচারনা চালায়, এলাকাবাসীদের ধারণা দেয় এখানে কৃষি খামার হবে। মূলত তারা অনিবন্ধিত কোম্পানি ল্যান্ডকোর নামে প্রচারণা চালিয়ে ব্যক্তি নামে জমি ক্রয় ও নামজারি করতে সমর্থ হয় মাত্র সাড়ে ১২ একর জমির। যাদের নামে জমি ক্রয় করা হয় তারা হলেনÑনীলঞ্জনা রায় চৌধুরী ও দীপ্ত চৌধুরী। এই নীলঞ্জনা রায় চৌধুরী ও দীপ্ত চৌধুরী ওসমান কাওসার চৌধুরী ছেলেমেয়ে। ওসমান কাওসার চৌধুরী বেক্সিমকোর একজন পরিচালক, ঠিকানা ৫০ নম্বর ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা। তাই এলাকাবাসীর সন্দেহ কৃষি খামার স্খাপনের আড়ালে করতোয়া সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে প্রতারণা করে ফসলি জমি ক্রয় করে নিচ্ছে। একই পরিমাণ জমি বাবার কাছ থেকেও ক্রয় করছে আবার ছেলের কাছ থেকেও ক্রয় করছে; এভাবে তারা একই পরিমাণ জমি দ্বিগুণ আকারে হিসাব করে প্রচারণা চালাচ্ছে। এলাকাবাসীকে ধোঁকা দেয়ার জন্য এবং নিজেদের সহজসরলভাবে উপস্থাপনের জন্য রাত্রীকালীন নারীদের কোরআন শিক্ষার আসর, ফ্রি ফ্রাইডে স্বাস্থ্যসেবা, মসজিদ নির্মাণ করেছে। তারা স্থানীয়দের বোঝাতে চায় ল্যান্ডকো একটি মানব দরদি প্রতিষ্ঠান।