যে কোনো উদ্যোগের শুরুতে আসে অনেক বাধাবিপত্তি। এসব গায়ে না মেখে লেগে থাকলে সফল হওয়া যায়। যারা সফল হন, তাদের অনুসরণ করলে আরও নতুন উদ্যোগ শুরু হয়। নানা খাতের সেসব সফল উদ্যোক্তাকে নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন
শখের বশে স্বল্প পরিসরে গড়ে তুলেছিলেন টার্কি পাখির খামার। এখন প্রতি মাসে টার্কি ও ডিম বিক্রি করে ভালো উপার্জন হচ্ছে তার। উৎপন্ন ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। খেতে সুস্বাদু টার্কি পাখির মাংসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাণিজ্যিকভাবে টার্কির খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন রংপুরের আবদুর রহিম সৌরভ।
লেখাপড়ার পাশাপাশি টার্কি খামার গড়ে তুলেছেন সৌরভ। নগরীর জলকর এলাকার বাসিন্দা মো. আবু বকর সিদ্দিকের পুত্র সৌরভ। রংপুর সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা নিয়ে পড়ালেখা করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে টার্কি পাখি সম্পর্কে জানতে পারেন। পরে ঢাকা, নওগাঁ ও সিলেটে গড়ে ওঠা কয়েকটি টার্কি খামারে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে সিলেট থেকে ১৭টি টার্কি বার্ড কিনে এনে খামার করেন।
দুমাস বয়সের একেকটি টার্কি কিনেছেন দুই হাজার টাকা করে। এর মধ্যে স্ত্রী টার্কি নয়টি ও পুরুষ আটটি। চয় থেকে সাত মাস বয়সে ডিম দেওয়া শুরু করে। দেশি মুরগির মতো ১৫ থেকে ২০টি ডিম দিয়ে কিছুদিন বিরতিতে আবার ডিম দেওয়ার কথা থাকলেও গত কোরবানি ঈদের পর থেকে প্রতিদিন ছয় থেকে সাতটি ডিম দিচ্ছে পাখিগুলো।
সৌরভ বলেন, ‘নয়টি স্ত্রী টার্কির জন্য সমানসংখ্যক পুরুষ টার্কির দরকার নেই।’ সংখ্যায় বেশি হলে পুরুষ টার্কি অধিকাংশ সময় মারামারিতে লিপ্ত হয়। তাই দুটি পুরুষ টার্কি রেখে বাকিগুলো বিক্রি করেছেন। সাধারণ মুরগির মতো রোগ বালাই হলেও টার্কির খামার করার পর বড় ধরনের কোনো অসুখ দেখা দেয়নি। তবে তিনি দাবি করেন, টার্কির রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই প্রবল।
ছয় মাসে একটি পুরুষ টার্কির ওজন দাঁড়ায় পাঁচ থেকে ছয় কেজিতে। স্ত্রী টার্কির বেলায় তিন থেকে চার কেজি। বর্তমানে তার খামারে ৭০টি টার্কি রয়েছে। এর মধ্যে বাচ্চা আছে ৩০টি। এ ছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু দেশি মুরগির মাধ্যমে টার্কির ডিম ফোটানোর ব্যবস্থা করেছেন। এক মাসের বাচ্চা জোড়া বিক্রি করেছেন দুই হাজার পাঁচশ টাকায়। তিনি বলেন, তার খামারে উৎপন্ন ডিম ইতোমধ্যে নিজ এলাকা ছাড়াও ঢাকা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ ও গোপালগঞ্জেও বিক্রি হয়েছে।
খামার শুরুর সময় ৪০ হাজার টাকা খরচ হলেও টার্কি পাখি ও ডিম বিক্রি করে মূল টাকা ঘরে তুলেছেন। তিনিই প্রথম ‘রংপুর টার্কি ফার্ম’ নামে বাণিজ্যিকভাবে টার্কি পাখির খামার করেছেন বলে দাবি করেন।
সৌরভের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, টার্কির মাংসের সুখ্যাতি বিশ্বজুড়ে। এর উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় টার্কি পাখি পালন করা বেশ লাভজনক। খাবার বলতে ঘাস হচ্ছে টার্কির প্রধান খাবার। এ ছাড়া বাঁধাকপি, কচুরি পানা ও দানাদার তাদের প্রিয় খাবার। তিনি উল্লেখ করেন, একটি পুরুষ টার্কি ৬ মাসে ৫ থেকে ৬ কেজি ওজন হয়ে থাকে। কেজিপ্রতি ৩শ টাকা কেজি ধরা হলে ৬ কেজি ওজনের একটি টার্কির মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৮শ টাকায়।
তিনি একশ ডিমপাড়া টার্কির খামার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য এক ব্যাচে পাঁচশ বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ইনকিউবেটর মেশিন স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন।
হ হুমায়ুন কবীর মানিক, রংপুর