শওকত আলী: বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব একটু বেশি। একটা সাইকেল হলে স্কুলে যাওয়াটা সহজ হয়। কিন্তু একসঙ্গে কিছু টাকা জোগাড় করে সন্তানকে একটি সাইকেল কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংক একটি ঋণ প্রকল্প চালু করেছে। যেখানে একটি নির্দিষ্ট বয়সের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সাইকেল কিনতে ঋণ দেবে সোনালী ব্যাংক।
স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাইসাইকেল ঋণ কর্মসূচিটি সম্প্রতি চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এখানে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়–য়া শিক্ষার্থীদের জন্য সাইকেল কিনতে এ ঋণ দেওয়া হয়। গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে ঋণ প্রকল্পটি চালু করা হলেও সারা দেশের শিক্ষার্থীরাই এ ঋণ সুবিধা পাবে।
সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশের মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াত স্বল্পব্যয়ী, পরিবেশবান্ধব ও অধিকতর সহজ করতে বাইসাইকেলের সংস্থান করার পরিকল্পনা করা হয়। এজন্য স্বল্প সুদে ব্যাংকটির মাইক্রোক্রেডিটের আওতায় এ ঋণটি বিতরণ করা হয়।
বাইসাইকেল কিনতে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে ব্যাংকটি। ঋণ নেওয়া যায় সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা। তিন বছরে মোট ৩৬টি কিস্তিতে ঋণ পরিশোধযোগ্য। কত টাকা ঋণ নেওয়া হবে সে অনুযায়ী কিস্তি নির্ধারণ করা হয়। মাসিক কিস্তির টাকা ঋণ হিসাবে জমা করতে হয় এবং শেষ কিস্তিতে সব বকেয়া পরিশোধ করার নিয়ম রাখা হয়েছে।
এ ঋণ প্রকল্পটির বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের জন্য বাইসাইকেল ঋণ প্রকল্পটি চালু করেছি। এতে শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাতায়াত সহজ হবে বলে আমরা আশাবাদী। একই সঙ্গে এটি পরিবেশবান্ধব বাহন।’
সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যদিও খুব বেশি ঋণ বিতরণ এখন পর্যন্ত হয়নি। তবে ধীরে ধীরে চাহিদা বাড়ছে। প্রচারেও একটু ঘাটতি রয়েছে বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত সারা দেশে বাইসাইকেল কেনার জন্য ৮৩ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি। ৩৫৩ জন শিক্ষার্থী ঋণসুবিধা নিয়ে বাইসাইকেল কিনেছে বলে জানা গেছে। তবে ক্ষুদ্র এ ঋণ প্রকল্পটির কোনো ঋণই এখন পর্যন্ত খেলাপি হয়নি বলে জানা গেছে।
নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকটির যে কোনো শাখার কর্ম এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসরত যে কোনো পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য এ ঋণের আবেদন করা যাবে। স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী বা তাদের মা-বাবার নামে এ ঋণ আবেদন করা যায়। তবে একটি পরিবার থেকে একটির বেশি ঋণ পাওয়া যাবে না।
তবে এ ঋণের জন্য কোনো ধরনের জামানতের প্রয়োজন পড়বে না। আর স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা নাবালক হওয়ায় কোনো ধরনের ডকুমেন্ট তাদের নামে সম্পাদন না করে মা-বাবা বা অভিভাবকের নামে ঋণটি দিতে হবে। তিনিই দলিলাদি সম্পাদন করবেন। আর আবেদনের সময় স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের দুই কপি এবং ঋণগ্রহীতার পাসপোর্ট সাইজের তিন কপি ছবি, জš§নিবন্ধন এবং পিএসসি পাসের সনদপত্রের ফটোকপি, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়নপত্র এবং ঋণগ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিতে হবে।
সোনালী ব্যাংক মাইক্রোক্রেডিটের আওতায় অন্য যেসব ঋণ কর্মসূচি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে হলো : ঋণ কর্মসূচি, দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা ঋণ কর্মসূচি, গ্রামীণ ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণ, ক্ষুদ্র খামার ঋণ, ফলদ, বনজ ও নার্সারি ঋণ, শহুরে মহিলা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋন্নয়ন ঋণ, লবণ উৎপাদন ঋণ, জাগো নারী গ্রামীণ ঋণ, ১০ টাকা হিসাবধারী কৃষক ওপ্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পুনঃঅর্থায়ন ঋণ এবং ব্যাংক-এনজিও লিংকেজ হোলসেল ঋণ কর্মসূচি।
Add Comment