করোনাভাইরাস

স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে

তৌহিদুর রহমান: চীনের উহান থেকে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এখন গোটা বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বজুড়ে মহামারি পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাকি বিশ্বের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন। প্রতিবেশী দেশ ভারতও সব দেশের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধ করেছে, বন্ধ করে দিয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত তিন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণার মতো কোনো সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগামী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা সন্তানের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা তাদের সন্তানের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে শিশুসন্তানদের অভিভাবকরা বেশি উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। কয়েকজন জানিয়েছেন, অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য এখনও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এ অবস্থায় সুরক্ষা কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি বিশ্বের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেস্কোর) তথ্যমতে, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে অন্তত ৩৯ কোটি ১৫ লাখ শিশু ও তরুণ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত ৪৯টি দেশ পুরোপুরি কিংবা আংশিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব দেশের অধিকাংশই এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের। দেশগুলোর মধ্যে ২৯টি দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২০টি দেশে বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার খবর জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম।

তবে বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, করোনাভাইরাসের কারণে দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি হয়নি। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন একাধিকবার। এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তার দাবি, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সতর্কতা হিসেবে জনসমাগম এড়িয়ে চলার কথা বলেছেন তিনি। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনসমাগম হওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে কি না, সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল থেকে।

রাজধানীর কয়েকটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু প্রতিষ্ঠানে হাত ধোয়ার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী মাস্ক পরে ক্লাসে হাজির হচ্ছেন। অনেকে বাড়ি থেকে সাবান কিংবা স্যানিটাইজার নিয়ে আসছেন নিজের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে। তবে তা খুবই সীমিত। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উদ্যোগ না নেওয়া হলে এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থা খুব একটা ফল দেবে না বলে অভিমত অনেকের। এছাড়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের সমাবেশ (অ্যাসেম্বিলি) ক্লাসরুমেই করানো হচ্ছে।

রাজধানীর বর্ণমালা স্কুলে অধ্যয়নরত এক শিশুর অভিভাবক রফিক উল্লাহ বলেন, তার সন্তানের স্কুলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার তার সন্তান স্কুলে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘শিশুদের কথা চিন্তা করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছুদিন বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এছাড়া স্কুলগুলোর সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও বাড়াতে হবে।’

তৃষ্ণা সরকার নামে একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘স্ট্যাটাস দেব কি দেব নাÑদ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকতে থাকতে দিলাম। আজ মেয়ের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিলামÑস্কুল, আড্ডা সব। কারণ করোনা যেহেতু অ্যাটাক করছে, আজ না করলেও কাল করতে পারে! আমার দেশের বেষ্টনীক্ষমতা কতটা মজবুত হতে পারে, যে যার জায়গা থেকে বুঝে নিন। সুস্থ বাবুসোনা দুপুরে বেরিয়ে আর ফিরল না! মা হয়ে ওকে ছাড়া কীভাবে প্রতিটি মুহূর্ত পার করছি, সেটা শুধু আমার মধ্যেই থাক, চাই না আর কোনো মা-বাবা এসবের মধ্য দিয়ে যাক। কাজেই আপনারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিনÑসন্তানকে কোচিং, স্কুল বা জনসমাগমে পাঠাবেন কি না!’

অবশ্য করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠি মাউশির অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব অফিসে পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রাজধানীর সরকারি মোহাম্মদপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী শরীফ উদ্দীন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সরকার নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকেই আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের আমি নিজে দেখভাল করছি। অভিভাবকদের প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ কারা কী অবস্থায় আছেন, তা জানা নেই। এছাড়া প্রাত্যহিক সমাবেশ ক্লাসরুমে করানো হচ্ছে। আশা করি, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় কোনো সমস্যা হবে না। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতিও সন্তোষজনক।’

রাজধানীর জনপ্রিয় জনসমাগমস্থলগুলোর একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ক্যাম্পাসে প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক মানুষ আসছেন। বিশেষত সন্ধ্যার পর লোকারণ্যে পরিণত হচ্ছে টিএসসি, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, কলাভবন ও কার্জন হলের মতো জায়গাগুলো। ফলে ভাইরাসটি সংক্রমিত হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা। করোনা-আতঙ্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে কমেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এছাড়া চারুকলা অনুষদসংলগ্ন পাবলিক লাইব্রেরিতেও পাঠক উপস্থিতি কমে যাওয়ায় এখন লাইন ছাড়াই প্রবেশ করতে পারছেন শিক্ষার্থীরা।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলে সীমিত পরিসরে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল সংসদের উদ্যোগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও টিস্যু পেপার বিতরণ করা হয়েছে। রোকেয়া হলের ওয়াশরুমগুলোয় দেওয়া হয়েছে সাবান। এছাড়া বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মাসি অনুষদ যৌথভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছে। সেগুলো শিগগিরই ক্লাসরুম, টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম সুমন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস-আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে পড়তে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। আগের মতো ভিড় নেই। তবে হলে শিক্ষার্থীরা সবাই আছে। কিন্তু করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সুরক্ষামূলক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’ এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সারা বিশ্বের তথ্য ও দেশের কর্তৃপক্ষের তথ্য বিশ্লেষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হলগুলোর প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাগতদের আগমনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় পরিসরের সভা-সমাবেশ এখন সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে যাতে আসতে না পারে, সে ধরনের নির্দেশনা দেওয়া আছে।’ সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

রাজধানীতে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আজিজুল হক বলেন, ‘করোনাভাইরাস উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রকে কাবু করে ফেলেছে এবং অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে ফেলেছে। তাই আমাদের দেশেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এটির বিস্তার ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।’

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী বৃষ্টি বলেন, ‘এখনও হল কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তবে সাধারণ ছাত্রীরা উদ্বেগে আছেন। নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু পারেন, সুরক্ষার ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’

অবশ্য রাজধানীর বাইরের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানা গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি গণরুম থেকে শিক্ষার্থীদের অন্য রুমে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগ ডে, নবীনবরণ, সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও রয়টার্সের খবর অনুয়ায়ী, গতকাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৩৫ হাজার জন। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত চার হাজার ৯০০ জনের। মৃতদের মধ্যে সিংহভাগই চীন, ইরান ও ইতালির নাগরিক। জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত ১১৮টি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০