সম্ভাবনাময় একটি ফসল স্কোয়াশ। পুষ্টিকর, সুস্বাদু, স্বল্পমেয়াদি, উচ্চ ফলনশীল, লাভজনক ও শীতকালীন নতুন জাতের সবজি এটি। বিদেশি সবজি এটি। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এ সবজির আবাদ হয়। এখন বাংলাদেশেও এটি চাষ করা হয়। সবজিটি লাউ গোত্রের। অন্য ফসলের চেয়ে স্কোয়াশ চাষের খরচ তুলনামূলক কম। টবেও চাষ করা যায়। গাছটি এক থেকে দুই হাত লম্বা হয়। মাছ ও মাংসের সঙ্গে রান্নাসহ ভেজেও খাওয়া যায়। বিশেষ করে চায়নিজ রেস্টুরেন্টে সবজি ও সালাদ হিসেবে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর শাকও
উপাদেয় খাবার।
চাষ পদ্ধতি
দোআঁশ মাটি স্কোয়াশ চাষের উপযোগী। তবে এর সঙ্গে ভার্মি কম্পোস্ট কিংবা গোবর মাটি মিশিয়ে নিলে ভালো পাওয়া যাবে। স্কোয়াশের বীজ একটি করে বপন করা যায় আবার একটি মাথায় একাধিক বপন করা যায়। প্রায় তিন ফুট দূরে দূরে দুই থেকে তিনটি বীজ বপন করা হয়। বীজ প্রায় এক ইঞ্চি গভীরে বপন করতে হবে। চারা গজানোর পর মাটি তুলে ছয় থেকে ১২ ইঞ্চি উঁচু করে দিতে হবে এবং এক থেকে দুই ফুট প্রশস্ত করতে হবে। বীজ লাগানোর মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ফুল ধরে। সাত থেকে আট সপ্তাহ পরে ফল ধরা শুরু হয়।
মালচিং পদ্ধতি
বিভিন্ন ধরনের বস্তু দিয়ে যখন গাছপালার গোড়া, সবজিক্ষেত ও বাগানের জমি বিশেষ পদ্ধতিতে ঢেকে দেওয়া হয়, তখন তাকে বলে মালচ। এ পদ্ধতিটি বলে মালচিং। স্কোয়াশ চাষে মালচিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ পদ্ধতিতে চারা টিকে গেলে গোড়ার চারপাশে মালচিং করলে তাপমাত্রা ঠিক থাকে। মাটি আর্দ্রতা ধরে রাখে। ফলে ফলন বাড়ে।
সেচ
সপ্তাহে দুই ইঞ্চি পানি শোষণ করে। তাই প্রয়োজনে পানি সেচ দিতে হবে।
জাত
স্কোয়াশ বিভিন্ন আকার ও বিভিন্ন রঙয়ের হয়। এর অনেক জাত রয়েছে। বেন্টেনট, প্যাটিন, বাটারক্রিপ, মেসকেট, পাগড়ি প্রভৃতি। আমাদের দেশে লম্বা জাতের স্কোয়াশ তুলনামূলক বেশি চাষাবাদ হয়।
রোগবালাই ও সমাধান
পাউডারি মিলডিউ
পাতা ও গাছের গায়ে সাদা পাউডারের মতো দাগ দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে পুরো পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্তের মাত্রা বেশি হলে পাতা হলুদ বা কালো হয়ে মারা যায়।
সংক্রমণের আগে করণীয়
আগাম বীজ বপন করা
সুষম সার ব্যবহার করা
রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করা
সুস্থ গাছ হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে
পরে করণীয়
আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করা
সালফার ছত্রাক নাশক যেমন কুমুলাস চার গ্রাম বা গেইভেট বা মনোভিট দুই গ্রাম অথবা কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাক নাশক যেমন গোল্ডাজিম শূন্য দশমিক পাঁচ মিলি. বা এমকোজিম বা কিউবি বা চ্যামপিয়ন দুই গ্রাম প্রতি লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করা।
মোজাইক রোগ
এ রোগ হলে গাছে হলুদ ও গাঢ় সবুজ ছোপ ছোপ মোজাইক করা পাতা দেখা দেয়। পাতা কুঁচকে যায়।
সংক্রমণের আগে করণীয়
আগাম বীজ বপন করা
সুষম সার ব্যবহার করা
পরে করণীয়
ক্ষেত থেকে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা
জাব পোকা ও সাদা মাছি এ রোগের বাহক, তাই এদের দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক যেমন এডমায়ার ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
ডাউনি মিলডিউ রোগ
বয়স্ক পাতায় এ রোগ প্রথম দেখা যায়। আক্রান্ত পাতায় গায়ে সাদা বা হলদে থেকে বাদামি রঙের তালির মতো দাগ দেখা যায়। ধীরে ধীরে অন্যান্য পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।
সংক্রমণের আগে করণীয়
আগাম বীজ বপন করা
সুষম সার ব্যবহার করা
রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করা
বিকল্প পোশাক যেমন আগাছা পরিষ্কার রাখা
আক্রান্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না
পরে করণীয়
গাছের আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করা
স রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম/প্রতি লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করা
স্কোয়াশ ফেটে যাওয়া সমস্যা
দীর্ঘ খরা বা শুষ্ক ও গরম অথবা হঠাৎ সেচ দেওয়া বা অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার বা হরমোন প্রয়োগের কারণে স্কোয়াশ ফেটে যেতে পারে।
সমস্যার আগে করণীয়
অতি ঘন করে স্কোয়াশ চাষ করবেন না
বপনের আগে জমি উত্তমরূপে চাষ দিয়ে ঝুরঝুরে করুন
পর্যাপ্ত জৈব সার প্রয়োগ করুন
পরে করণীয়
খরা মৌসুমে নিয়মিত পরিমিত সেচ দেওয়া
এ ধরনের সমস্যা অনুমান করতে পারলে ক্ষেতে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার বা হরমোন দেবেন না।
ব্লোজম অ্যান্ড রট
আক্রান্ত গাছে প্রথমে কচি স্কোয়াশ নিচের দিকে পচন দেখা দেয়। ধীরে ধীরে পুরো ফলটিই পচে যায়। সাধারণত অম্লযুক্ত মাটিতে বা ক্যালসিয়ামের অভাব আছে এমন জমিতে এ রোগ দেখা যায়।
সংক্রমণের আগে করণীয়
একই জমিতে বারবার একই সবজি আবাদ করবেন না
জমিতে শতাংশ প্রতি চার কেজি হারে ডলোচুন প্রয়োগ করলে পরপর তিন বছর প্রয়োগ করতে হবে না
মাটি পরীক্ষা করে জমিতে সুষম সার
ব্যবহার করা
পরে করণীয়
ক্ষেতে পরিমিত সেচ দেওয়া
গর্ত বা পিট প্রতি ৫০ থেকে ৮০ গ্রাম জিপসাম সার দেওয়া।
সতর্কতা
অনেক সময় ফলের মাছি পোকার আক্রমণেও এ রকম পচন দেখা দেয়।
শিপন আহমেদ