Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:33 am

স্টারলাইনার পরীক্ষামূলক মহাকাশযান পাঠাচ্ছে বোয়িং

 

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে মহাকাশের উদ্দেশে আগামী ১০ তারিখের পর প্রথমবারের মতো দুই ক্রুসহ পরীক্ষামূলকভাবে ফ্লাইট উৎক্ষেপণ করবে। খবর: বিবিসি।

পরীক্ষামূলক ফ্লাইটটি সফল হলে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের পাশাপাশি বোয়িং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) থেকে ক্রু পরিবহনকারী দ্বিতীয় বেসরকারি সংস্থা হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে উৎক্ষেপণটি বোয়িংয়ের জন্য একটি ঝুঁকির মুহূর্ত হিসেবে মনে করা হচ্ছে। একের পর এক দুর্ঘটনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ সংস্থা বোয়িংয়ের এয়ারলাইন ব্যবসা চাপে পড়েছে এবং তাদের স্পেস সেক্টর স্টারলাইনারও বিকাশজনিত অসুবিধার কারণে তদন্তে রয়েছে।

ওপেন ইউনিভার্সিটির স্পেস সায়েন্টিস্ট সিমেন বারবার বলেন, এটি বোয়িংয়ের জন্য সত্যিই একটি বড় দিন। পরীক্ষামূলক ফ্লাইট নিয়ে কিছু সমস্যা হলেও এতে অনেক ভালো কিছু রয়েছে, কেননা কোম্পানিটি অনেক দিন ধরে মহাকাশযান নিয়ে কাজ করছে।

প্রসঙ্গত, মহাকাশযানের প্রযুক্তিগত কিছু বাধার কারণে বোয়িংয়ের মিশনটি কয়েক বছর ধরে বিলম্বিত হচ্ছে।

স্টারলাইনার মূলত ২০১৫ সালে প্রথম ক্রু ছাড়া ফ্লাইট পরিচালনার উদ্যোগ নেয়। তবে সফ্টওয়্যার ত্রুটির কারণে তা ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিলম্বিত হয়। থ্রাস্টার রকেটের অতিরিক্ত ফায়ারিংয়ের কারণে জ্বালানি খরচ বেশি হওয়ায় ক্যাপসুলটি মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছাতে পারেনি। দ্বিতীয় প্রচেষ্টার পরিকল্পনা করা হয় ২০২১ সালের আগস্টে। তবে প্রপালশন সিস্টেমের সমস্যার কারণে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত তা আবার বিলম্বিত হয়। স্টারলাইনার শেষ পর্যন্ত তার সম্পূর্ণ মিশন সম্পন্ন করতে সক্ষম হলেও পৃথিবীতে ফিরে আসার পর কিছু থ্রাস্টার ও কুলিং সিস্টেমের কর্মক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।

গত সোমবারও উৎক্ষেপণ থেকে সরে আসে বোয়িং। অক্সিজেন ভাল্বের সমস্যার কারণে এবারও পিছিয়ে আসে। ওয়্যারিং ও প্যারাশুটগুলোর নিরাপত্তা ত্রুটি ছিল, যা সমাধান করা হয়। সব ত্রুটির সঠিক ও নির্ভুল সমাধানের বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নাসা বোয়িং মহাকাশচারীদের মিশনে উড্ডয়নের জন্য অনুমতি দেয়নি। পরবর্তী উৎক্ষেপণেও মহাকাশযানের কোনো সমস্যা দেখা দিলে মিশনটি বাতিল করা হবে।

সবশেষ ফ্লাইট উৎক্ষেপণের আগে একটি সংবাদ সম্মেলনে নৌবাহিনী প্রশিক্ষিত মহাকাশচারী ব্যারি উইলমোরকে ফ্লাইটের বিপত্তি ও পরিবারের শঙ্কার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যাকে বিপত্তি হিসেবে বর্ণনা করা ভুল হবে। আমরা ধাপে ধাপে এগিয়ে যাব। আমরা একটি সমস্যা খুঁজে পেয়েছি এবং তা সংশোধন করেছি। বিষয়টি আমরা আমাদের পরিবারের কাছে তুলে ধরেছি, যাতে তারা বুঝতে পারে।

মহাকাশযানটির পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামস। তিনি বলেন, আমরা সবাই প্রস্তুত হয়ে এখানে এসেছি। আমাদের বন্ধুবান্ধব ও পরিবার এ সম্পর্কে জানেন।

পুরোনো মহাকাশ শাটলগুলোর পরিবর্তে ক্রু পরিবহনের জন্য নাসা স্পেসএক্স ও বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, স্পেসএক্স ও বোয়িংয়ের ক্যাপসুলগুলো পরিষেবা দেয়া শুরু করবে এবং ছয়টি অপারেশনাল মিশনের জন্য অর্থ দেয়া হবে। স্পেসএক্সের চুক্তির মূল্য ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার এবং বোয়িংয়ের ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।

এরই মধ্যে স্পেসএক্স ২০২০ সালে ক্রুসহ ফ্লাইট পরীক্ষা চালাতে সক্ষম হয়েছে। এদিকে বোয়িং স্পেসএক্সের চেয়ে চার বছর পিছিয়ে রয়েছে। সংস্থাটি ত্রুটিগুলো ঠিক করার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে।

বোয়িংয়ের কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রাম ম্যানেজার মার্ক ন্যাপি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে ত্রুটি খুঁজে পাওয়া নতুন মহাকাশযান তৈরির প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে একটি স্বাভাবিক অংশ।

ডিজাইন ও বিকাশে ক্রমাগত উত্থান-পতন থাকলেও সামগ্রিকভাবে সবকিছুর সমাধান রয়েছে।

ইউকে স্পেস এজেন্সির স্পেস এক্সপ্লোরেশনের হেড লিবি জ্যাকসনের মতে, বোয়িংয়ের মহাকাশযানের পরিষেবায় আসার অর্থ হচ্ছে স্পেসএক্সের জন্য প্রতিযোগিতা তৈরি হওয়া, যা এ খাতে খরচ কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে।

নাসা সাধারণত এ ধরনের মহাকাশযানের মালিক হতে ও পরিচালনা করতে ইচ্ছুক নয়। তারা এখন বাণিজ্যিক খাত থেকে পরিষেবা কিনে থাকে।