স্টারলিংকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ চীনের

শেয়ার বিজ ডেস্ক: চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাংহাই স্পেসকম স্যাটেলাইট টেকনোলজির (এসএসএসটি) কিয়ানফান বা স্পেসসেল গত সপ্তাহে লো আর্থ অরবিটে (এলইও) ১৮টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করেছে। ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংক নেটওয়ার্কের মতো নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরি করতে স্যাটেলাইটগুলো পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এটি মহাকাশ থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কভারেজ বিমিং ১৪ হাজার স্যাটেলাইটের একটি নক্ষত্রপুঞ্জ হবে। খবর: সিএনএন।

চীনের শানসি প্রদেশের উত্তরে তাইয়ুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টার থেকে পাঠানো স্যাটেলাইটগুলো ‘লং মার্চ সিক্স’ রকেটের মাধ্যমে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে ছোট ছোট স্যাটেলাইটের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে স্টারলিংক। উল্লেখ্য, প্রথাগত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সাধারণত একটি একক জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করে, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার কিলোমিটার ওপরে প্রদক্ষিণ করে। সেই তুলনায় স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো ভূপৃষ্ঠের অনেক কাছ দিয়ে (৫০০-৬০০ কিলোমিটার) উড়ে বেড়ায়। এর ফলে সংযোগে সময় যেমন কম লাগে, তেমনি গতিও বেড়ে যায়।

স্টারলিংকের প্রতিটি স্যাটেলাইট চারটি অ্যারে অ্যান্টেনা এবং দুটি প্যারাবোলিক অ্যান্টেনা ব্যবহার করে।
ইন্টারনেটের গতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ওকলার তথ্যমতে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে স্টারলিংক ইন্টারনেটে ডাউনলোডের গড় গতি ছিল ৬৭ এমবিপিএস (প্রতি সেকেন্ডে ৬৭ মেগাবিট ডেটা আদান-প্রদানে সক্ষম)। এটি ইলন মাস্কের প্রতিশ্রুত ৩০০ এমবিপিএসের চেয়ে অনেক কম। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সংযোগের গতির চেয়েও (১৯৩ এমবিপিএস) অনেকটা পিছিয়ে স্টারলিংক। স্টারলিংক ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠিত স্পেসএক্স স্পেস কোম্পানির একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে মহাকাশে স্টারলিংকের প্রায় ছয় হাজারের মতো স্যাটেলাইট রয়েছে। ভবিষ্যতে ৪২ হাজারের বেশি স্টারলিংক স্যাটেলাইট বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো সাধারণত পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ৩০০ কিলোমিটার থেকে দুই হাজার কিলোমিটার উচ্চতায় পাঠানো হয়। সস্তা হওয়ার কারণ উচ্চ কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটের তুলনায় দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা দিতে পারে স্টারলিংক স্যাটেলাইট।

স্টারলিংকের সঙ্গে পাল্লা দিতে কাজ করছে সাংহাই স্পেসকম স্যাটেলাইট টেকনোলজি। বেশির ভাগ মানুষ স্থলভিত্তিক অবকাঠামোর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সংযোগ গ্রামীণ, স্বল্প-সংস্থানযুক্ত ও দুর্যোগ-প্রভাবিত অঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
চীন সেলফ মোড গাড়ি এবং অন্যান্য ইন্টারনেট চালিত ডিভাইসের মতো প্রযুক্তি খাতেও নেতৃত্ব দিতে চায়। তাই জি সিক্সটি স্টারলিংক নামে পরিচিত চীনের মেগা নক্ষত্রমণ্ডল কিয়ানফান সামনের বছরগুলোয় পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে প্রায় ৪০ হাজার স্যাটেলাইট চালু করার পরিকল্পনা করছে।
মহাকাশে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে বেইজিংয়ের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে চীন তার বাণিজ্যিক মহাকাশ খাতকে আরও জোরদার করছে। দেশটি এরই মধ্যে তার উচ্চাভিলাষী জাতীয় মহাকাশ কর্মসূচিতে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।

এর ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে রয়েছে চাঁদে নভোচারী স্থাপন করা, পাশাপাশি নেভিগেশন, যোগাযোগ ও নজরদারির জন্য সামরিক সুবিধা যুক্ত স্যাটেলাইট চালু করা।
প্ক ল্পের উপ-পরিচালক ঝু জিয়াওচেন সিসিটিভিকে বলেছেন, বেশিরভাগ অঞ্চল কাভারেজের জন্য এই স্যাটেলাইটের সংখ্যা যথেষ্ট। কিয়ানফান নক্ষত্রমণ্ডলের উৎক্ষেপণ এমন সময় এলো যখন চীনের শীর্ষ নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ক্ষমতা এবং প্রযুক্তি উৎপাদনসহ বাণিজ্যিক মহাকাশ খাতের উন্নয়ন দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার।

ইয়াংজি নদীর বদ্বীপজুড়ে রাষ্ট্র-সমর্থিত প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০২১ সালে কিয়ানফান প্রকল্পের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। এর অপারেটিং কোম্পানি সাংহাই-সরকার সমর্থিত এসএসএসটি এই বছরের শুরুতে প্রকল্পের জন্য ৯৩৩ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০