Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 3:49 am

স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে জমার সময় বেঁধে দিল বিএসইসি

মো. আসাদুজ্জামান নূর: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনও অবণ্টিত লভ্যাংশ পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিলে জমা দেয়নি, তাদের আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ওই অর্থ ও শেয়ার তহবিলের ব্যাংক ও বিও হিসাবে জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ সময়ের মধ্যে অবণ্টিত লভ্যাংশ স্থিতিশীল তহবিলে স্থানান্তর না করলে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে কমিশন। গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি সব তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠিয়েছে বিএসইসি।

জানা যায়, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও তারল্য সংকট দূর করতে ২০ হাজার কোটি টাকার পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল (ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড) গঠন করে বিএসইসি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের অবণ্টিত নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ বা বিতরণ না হওয়া যেকোনো তহবিল বা অমীমাংসিত শেয়ার বা দাবি না করা শেয়ার বা ফেরত না দেয়া পাবলিক সাবস্ক্রিপশনের অর্থ দিয়ে এ তহবিল গঠন করা হয়েছে। তাই এখনও যেসব কোম্পানি অবণ্টিত নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ তহবিলে জমা দেয়নি, তাদের সতর্ক করে ওই চিঠি পাঠায় বিএসইসি।

বিএসইসির ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এর আগে এ বিষয়ে কমিশন কর্তৃক একাধিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএসইসির ওই নির্দেশনা অনুযায়ী আপনাদের ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে নগদ ও স্টক বা বোনাস লভ্যাংশ বা যেকোনো তহবিল বা অবণ্টিত শেয়ার বা অমীমাংসিত বা অনাকাক্সিক্ষত দাবিহীন বা ফেরত না হওয়া পাবলিক সাবস্ক্রিপশনের অর্থ হস্তান্তর করার কথা ছিল।’

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে যে, কিছু কোম্পানি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উল্লিখিত বিধি এবং কমিশনের নির্দেশের বিধান অনুযায়ী অবণ্টিত নগদ ও স্টক বা বোনাস শেয়ার হস্তান্তর সম্পন্ন করেনি। তাই ওই কোম্পানিগুলোকে তাদের অবণ্টিত লভ্যাংশ আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ব্যাংক ও বিও হিসাবে স্থানান্তর করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো। নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হলে আর্থিক জরিমানাসহ সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে বিষয়টি ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি, ক্যাপিটাল মার্কেট স্টেবিলাইজেশন ফান্ডের চিফ অব অপারেশন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড পরিচালনার জন্য ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস, ২০২১’ বিএসইসি প্রণয়ন করেছে। গত বছর ২৭ জুন রুলসটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী, ফান্ডটি ব্যবস্থাপনার জন্য ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নরস রয়েছে। ফান্ড ব্যবস্থাপনার জন্য চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।

এছাড়া বোর্ড অব গভর্নরসের সদস্যরা হলেনÑবিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ তানজিলা দীপ্তি, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তারিক আমিন ভুঁইয়া, সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, সিডিবিএলের স্বতন্ত্র পরিচালক একেএম নুরুল ফজলে বাবুল, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) পরিচালক ড. মোহাম্মদ তারেক, বিএপিএলসির সভাপতি আজম জে চৌধুরী, দি ইন্সটিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনটেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সদস্য একেএম দেলোয়ার হোসেন। ফান্ডটির চিফ অব অপারেশন (সিওও) হিসেবে অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. মনোয়ার হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএসইসি। ফান্ডটি পরিচালনা করবে আইসিবি।

গত ১৫ মার্চ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জš§বার্ষিকী উদ্যাপন ও শেয়ারহোল্ডারদের দাবি মীমাংসা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ বিষয়ে হুশিয়ারি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘৩১ মার্চের মধ্যে অবণ্টিত লভ্যাংশের হিসাব দিতে না পারলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবণ্টিত লভ্যাংশের পরিমাণের থেকেও কয়েকগুণ বেশি জরিমানা আদায় করা হবে।’ এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানি ও সিকিউরিটিজগুলোকে আবার অবণ্টিত লভ্যাংশ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।