Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:14 pm

স্ট্রবেরি চাষে উম্মোচিত হোক সম্ভাবনার দুয়ার

দৃষ্টিনন্দন ফল হিসেবে স্ট্রবেরির সুখ্যাতি বিশ্বজুড়ে। এটি মূলত শীতপ্রধান দেশের ফল। আগে ফলটি পুরোপুরি আমদানি করতে হতো বাংলাদেশে। আনন্দের বিষয়, বর্তমানে বাংলাদেশেই চাষ হওয়ায় শহর ও গ্রামের বাজারে এর দেখা মিলছে। পশ্চিমা দেশগুলোয় চিনি ও ক্রিমের সঙ্গে সরাসরি ফলটি খাওয়া হয়। তাছাড়া এ থেকে উৎপন্ন হয় জ্যাম ও জেলি। আইসক্রিম ও কেকেও এটি যোগ করে বাড়তি মাত্রা।

গতকাল দৈনিক শেয়ার বিজে সিরাজগঞ্জে স্ট্রবেরি চাষ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলা, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় স্ট্রবেরি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে রাবেত্রী ও আমেরিকার দুই জাতের স্ট্রবেরি ফলের চারা পাওয়া যায়, যার মধ্যে রাবেত্রীই সবচেয়ে সুস্বাদু। স্ট্রবেরি গাছে সাধারণত দেড় থেকে দুমাসের মধ্যেই ফল চলে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ট্রবেরি চাষ আলু ও বেগুন চাষের মতোই সহজ। প্রতিটি গাছে আড়াই থেকে তিনশ গ্রামের মতো ফল ধরে আর এক বিঘা জমিতে ছয় হাজারের মতো গাছ জন্মে। চাষ করা অপেক্ষাকৃত সহজ এবং উচ্চ মুনাফার সুযোগ থাকায় উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় কৃষক ও বেকার যুবকরা স্ট্রবেরি চাষে ক্রমে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সেজন্য আজকাল রাজধানীর ফলের দোকানগুলোয় ছোট ছোট বাক্সে মিলছে লাল রঙের এ ফলটি।

টক-মিষ্টি স্বাদের ফলটি শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়, এর রয়েছে উচ্চ পুষ্টিগুণ। এর ৯৭ শতাংশই ভিটামিন সি। ক্যালরি কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগী এবং স্থূলকায় ব্যক্তিরা এটি নির্দ্বিধায় খেতে পারেন। আমাদের দেশে পথে-ঘাটে আম-জামের মতো স্ট্রবেরি ভর্তাও জনপ্রিয়তা লাভ করছে। মৌলিক সুঘ্রাণ এটিকে দিয়েছে আইসক্রিম, চকোলেট, কেক, বিস্কুট এসবে অনন্য ফ্লেভার হিসেবে ব্যবহার হওয়ার সুযোগ। দেশে উৎপন্ন হওয়ায় এটি আগের চেয়ে কম দামে পাওয়া গেলেও বড় বিনিয়োগের অভাবে ব্যাপকভাবে এটি চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। আমাদের দেশে আম, কলা, কমলায় যে বিনিয়োগ হয়, সে ধরনের বিনিয়োগ স্ট্রবেরিতে করতে পারলে তা রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগও তৈরি হতো। উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন, গবেষণার মাধ্যমে দেশের মাটিতে আরও উন্নত ও সুস্বাদু স্ট্রবেরি উৎপাদন সম্ভব। এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছেন। তবে তারা মনে করেন, উৎপাদনের তুলনায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি এখানে। তাই উৎপাদন হঠাৎ বেড়ে গেলে সংরক্ষণের অভাবে ফল নষ্ট হতে পারে, কৃষক বা বিনিয়োগকারীরাও হতে পারেন ক্ষতির শিকার। তাই লাভজনক এ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ ও সরকারি সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ফলটি প্রক্রিয়াজাত করে অন্যান্য প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদন শিল্পও গড়ে তোলা সম্ভব।