কোন দেশের স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খাবার সেরা? উঁহুঁ, সে বিতর্কে না গিয়ে আসুন জেনে নিই কোন দেশে বেড়াতে গিয়ে সেখানকার জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড না খেয়ে ফিরে আসার মানে জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা মিস করা! আজ বানি চাও’র কথা জানাচ্ছেন হাসানুজ্জামান পিয়াস
দক্ষিণ আফ্রিকার সুস্বাদু ও জনপ্রিয় খাবার বানি চাও। একে বানি বলেও ডাকা হয়। বানি চাওয়ের আদি স্থান ডারবান। এ শহরের ভারতীয় জনগোষ্ঠী খাবারটির প্রচলন শুরু করে। বর্তমানে ডারবানের পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন শহরের মানুষের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় খাবার এটি। এর প্রধান উপাদান পাউরুটি ও তরকারি। এক টুকরা পাউরুটির মাঝে গর্ত করে তরকারি দিয়ে পূর্ণ করে খাওয়া হয়। ছোট আকারের বানি চাও একটি ব্রেডের এক-চতুর্থাংশ দিয়ে তৈরি করা হয়। কৃষ্ণকায় দক্ষিণ আফ্রিকানরা একে ‘কোটা’ বলে।
বানি চাওয়ের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে মনে করা হয়, ১৯৪০ সালের দিকে ডারবানের ভারতীয় জনগোষ্ঠীই খাবারটি চালু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গেলো ও তৎকালীন রোডেসিয়ায় বিক্রি হতো। এমনকি এখনও এর পার্শ্ববর্তী শহর কাদোমা’তে (আগের নাম গাটোমা) বিক্রি হয়। বানি চাওয়ের উৎপত্তি নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। ১৯৪০ সালের দিকে ডারবানে বসবাসকারী ভারতীয়রা আখক্ষেতে কাজ করত। দুপুরের খাবার সঙ্গে নিয়ে সকালে তারা বের হতো। কিন্তু খাবার নিয়ে যাতায়াত করা কঠিন ছিল। তাই খাবার নিয়ে পরিবহন কিংবা যাতায়াতের সুবিধার জন্য তারা পাউরুটির মাঝে গর্ত করে তা সবজি কিংবা তরকারির দিয়ে ভরে নিয়ে যেত। তখন কেবল সবজি বা তরকারিসহ সে রুটি খাওয়া হলেও পরবর্তীকালে মাংসের প্রচলন শুরু হয়।
নামকরণের জন্য গল্প প্রচলিত রয়েছে যে, ডারবানের ভিক্টোরিয়া ও আলবার্ট স্ট্রিটের এক কোনায় ওই সময় একটি দোকান দেওয়া হয়। সেখানে এভাবে রুটি ও তরকারি বিক্রি করা হতো। যেসব মানুষ সেটি চালাত তাদের
বানিয়াস বলা হতো। জাতিবিদ্বেষপূর্ণ শাসন ব্যবস্থার সময় অবশ্য ভারতীয়রা কোনো দোকান দিতে পারত না। তারা তাদের বাড়ির পেছনের জানালা দিয়ে শ্রমিকদের কাছে বানি চাও বিক্রি করত। ঐতিহ্যগতভাবে নিরামিষভোজী ভারতীয়রা রুটি ও মটরশুঁটির তরকারিসহ এটি খেত। এজন্য একে বিনস্ বানি বলা হয়।
বানি চাও ভারতীয় জনগোষ্ঠী ছাড়াও ডারবানের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। বানি চাও তৈরি হয় ডারবানের ঐতিহ্যগত রেসিপি দিয়ে। সাধারণত রুটির সঙ্গে খাসি কিংবা ভেড়ার মাংস, মুরগির মাংস ও মটরশুঁটির তরকারি খাওয়া হয়। সঙ্গে পরিবেশন করা হয় গাজর কুচি, মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি সালাত, যা সামবালস্ নামে পরিচিত। যদি আপনি কোনো রেস্তোরাঁ কিংবা ফুডকোর্টে মাটন দিয়ে খেতে চান, তাহলে আপনাকে কোয়াটার বানি চাও অর্ডারের সময় কোয়াটার মাটন এবং পছন্দের ফ্লেবারের কথা উল্লেখ করতে হবে।
সহজে সুস্বাদু খাবারটি প্রস্তুত করা যায় বলে ফুডকোর্টসহ বিভিন্ন ফাস্টফুড স্টলের পাশাপাশি বহু মানুষ এটি বাসায় তৈরি করে। দামেও বেশ সস্তা। ভারতীয় একটি ফাস্টফুড কোর্টে বানি চাও খেতে খরচ পড়বে তিন থেকে চার ডলার। দক্ষিণ আফ্রিকাতে বেড়াতে গেলে স্বাদ নিতে পারেন জনপ্রিয় এই খাবারটির। হ
স্ট্রি ট ফু ড: বানি চাও
