শিশুর জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোনো খাবারের প্রয়োজন নেই। ছয় মাসের পর থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত পরিপূরক খাবারের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধই শিশুর জন্য উৎকৃষ্ট, বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও রোগ প্রতিরোধকারী খাদ্য। মায়ের দুধে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব খাদ্য উপাদান থাকে, যা মায়ের প্রতিদিনের খাবার অথবা শরীরে সঞ্চিত পুষ্টি উপাদান থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। তাই এ সময় মাকে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত। কারণ ল্যাকটোজ, ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়রন, কপার, ফোলেট ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান মায়ের শরীরে ঘাটতি করে হলেও বুকের দুধে সরবরাহ হতে থাকে। কিন্তু মায়ের শরীরে যদি আয়োডিন, ভিটামিন এ, সেলেনিয়াম ও বি-ভিটামিনগুলোর ঘাটতি থাকে, তাহলে বুকের দুধেও এগুলোর অভাব দেখা দেয়। কাজেই স্তন্যদানকারী মায়ের অপুষ্টি রোধে এবং বুকের দুধের গুণগত মান অক্ষুন্ন রাখতে নিন্মলিখিত বিষয়গুলোর দিকে নজর দেয়া জরুরি।
প্রতিবার শিশুকে বুকের দুধ দেয়ার আগে মা যদি এক থেকে দুই গ্লাস পানি বা তরলজাতীয় খাবার (দুধ, স্যুপ, ফলের রস, রসালো ফল ও পানিসমৃদ্ধ সবজি) খান, তাহলে দুধ বেশি নিঃসরিত হয়। প্রতিদিন দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার, ডিম, মাছ, মাংস, ডাল বা ডালজাতীয় খাবার খাবেন, যাতে ভালো মানের প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম এবং বি-ভিটামিনগুলো ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়। ভিটামিন ডি’র জন্য মা ও শিশু দুজনই প্রতিদিন কিছুক্ষণ সূর্যের আলোয় থাকবেন। প্রতিদিন গাঢ় সবুজ ও রঙিন শাকসবজি এবং মৌসুমি ফল খেলে প্রচুর আঁশ ছাড়াও ক্যালসিয়াম, আয়রন, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি, ফোলেট ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট পাওয়া যাবে। শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ অব্যাহত রাখতে আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে হবে। অতিরিক্ত তেলে ভাজা ও মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। চা-কফি পান থেকে বিরত অথবা সীমিত করতে হবে। তামাক পরিহার করতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের সাপ্লিমেন্ট ও ওষুধ সেবন করবেন না। খাদ্যবাহিত রোগের সংক্রমণ এড়াতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দুধ, ডিম, মাছ, মাংসের ক্ষেত্রে ভালো করে রান্না করতে হবে।
ড. নুরুন নাহার দিলরুবা
পুষ্টিবিদ ও শিক্ষক
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর