দেহের অন্যান্য স্থানের মতো স্তনে অস্বাভাবিকভাবে কোষ বাড়ার কারণে কোনো চাকা বা পিণ্ডের সৃষ্টি হলে তাকে টিউমার বলে। বিনা প্রয়োজনে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন থেকেই মূলত এর সৃষ্টি। স্তনে টিউমার দুই ধরনের হয়। বিনাইন টিউমার, যা ক্ষতিকারক নয়। এটা উৎপত্তিস্থলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আরেকটা হচ্ছে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, যা আগ্রাসী বা ক্ষতিকর। এই টিউমার উৎপত্তিস্থলের সীমানা ছাড়িয়ে আশপাশের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা গ্রন্থি আক্রান্ত করে, এমনকি রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে দূরের কোনো অঙ্গে আঘাত হানতে পারে।
স্তন ক্যানসার সাধারণত স্তনের দুধবাহিত নালিতে হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য টিস্যু থেকেও শুরু হতে পারে। একটি পিণ্ড বা চাকা হিসেবেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি প্রথম ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে বড় হয়ে শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। স্তনের সঙ্গে কাছাকাছি বগলতলার লসিকা গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ডগুলোর খুবই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকায় এগুলোয় ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে।
ঝুঁকি বা রিস্ক ফ্যাক্টর: পুরুষেরও স্তন ক্যানসার হতে পারে। তবে নারীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা শতগুণ বেশি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। অজানা কারণে আমাদের দেশে ৪০ বছরের পরই বেশি দেখা যায়।
বংশগত: পরিবারের কোনো নিকটাত্মীয়, যেমন মা, খালা, বড় বোন বা মেয়ে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকলে তারও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে। ১২ বছর বয়সের আগে যেসব নারীর পিরিয়ড শুরু হয় এবং ৫০ বছর বয়সের পর পিরিয়ড বন্ধ হয়, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
সন্তান সংখ্যা: নিঃসন্তান নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে। ৩০ বছর বয়সের পর বিয়ে এবং প্রথম সন্তানের মা হওয়া স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানোর অভ্যাস স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। খাদ্যাভ্যাস: শাক-সবজি ও ফলমূল কম খেয়ে চর্বি ও প্রাণিজ আমিষজাতীয় খাবার বেশি খেলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। ওজন: অতিরিক্ত ওজন এবং কায়িক পরিশ্রমের অনভ্যাস এর ঝুঁকি বাড়ায়।
এছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে আছেÑতেজস্ক্রিয় বিকিরণ, তামাকজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার, স্তনে কোনো অস্বাভাবিকতা থাকা প্রভৃতি।
(বাকি অংশ আগামীকাল)
ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন
বিভাগীয় প্রধান, ক্যানসার ইপিডেমিওলজি বিভাগ
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
