গতকালের পর
দুটি উপায়ে প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা যায়। আবার যাদের মধ্যে লক্ষণ নেই কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে তাদের মধ্য থেকে রোগী শনাক্ত করা উচিত।
স্তনে চাকা বা প্লি, নিপল বা বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া, অসমান বা বাঁকা হওয়া, নিপল দিয়ে অস্বাভাবিক রস বা রক্তক্ষরণ হওয়া, চামড়ার রং বা চেহারায় পরিবর্তন, বগলতলায় পিণ্ড বা চাকা।
যাদের লক্ষণ দেখা দেয়নি কিন্তু ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি, সহজ কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের মধ্য থেকে রোগী খুঁজে বের করার নাম ক্যানসার স্ক্রিনিং। স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং করার প্রধানত তিনটি পদ্ধতি রয়েছে।
মেমোগ্রাম বা বিশেষ ধরনের এক্স-রে। এর সাহায্যে স্তনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়ে। ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন বা চিকিৎসক দিয়ে স্তন পরীক্ষা। সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন বা নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা।
উন্নত দেশে স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ে প্রধানত মেমোগ্রামকে বেছে নেয়া হয়। সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের এক, দুই বা তিন বছর পর পর নিয়মিত এই পরীক্ষা করা হয়। এটি একটি বিশেষ ধরনের এক্স-রে, যার মাধ্যমে স্তনে খুব ছোট চাকা বা অন্যান্য অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়ে। এই পদ্ধতি তুলনামূলক ব্যয়বহুল এবং খুব সহজলভ্য নয় বলে উন্নয়নশীল দেশে অন্য পদ্ধতিগুলোর ওপর জোর দেয়া হয়।
চিকিৎসক বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে স্তন পরীক্ষা করাকে ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন বলে। চিকিৎসক স্তন ও বগলতলায় কোনো চাকা বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন আছে কি না, তা সুনির্দিষ্ট নিয়মে সযত্নে পরীক্ষা করে দেখেন। একজন নারী নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করবেন। মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে যদি নিয়মিত নিজের স্তন ভালোভাবে পরীক্ষা করেন তাহলে যে কোনো ধরনের অসামঞ্জস্য বা পরিবর্তন নিজেই প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করতে পারবেন।
২০ বছর বয়স থেকে সারা জীবন প্রতি মাসে একবার নিজের স্তন পরীক্ষা করুন। অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন আপনার কাছে ধরা পড়লে চিকিৎসক বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে স্তন পরীক্ষা করান। চিকিৎসক যদি কোনো চাকা বা পিণ্ড বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন শনাক্ত করেন, তাহলে তার পরামর্শে মেমোগ্রাম, স্তনের আলট্রাসনোগ্রাম বা অন্য পরীক্ষাগুলো করানো উচিত। মনে রাখবেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে স্তন ক্যানসার নিরাময়ের সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। [শেষ]
ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন
বিভাগীয় প্রধান, ক্যানসার ইপিডেমিওলজি বিভাগ
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল