Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 12:57 am

স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা জরুরি

বাংলাদেশে ক্যানসারজনিত মৃত্যু নারীদের বেশি। সঠিক সময়ে ধরা না পড়া, অজ্ঞতা ও অসচেতনতা এর প্রধান কারণ। শরীরের কোথাও কোষকলা অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে বাড়তে প্লি হয়ে গেলে তাকে টিউমার বলে। টিউমার তিন ধরনের-বিনাইন (ক্ষতিকর নয়), ম্যালিগন্যান্ট (ক্যানসার) ও প্রি-ম্যালিগন্যান্ট (ক্যানসার নয়, তবে ভবিষ্যতে ক্যানসারে রূপ নেয়ার আশঙ্কা)।

বিনাইন নাকি ম্যালিগন্যান্ট, তা চিকিৎসক প্লিটি হাত দিয়ে পরীক্ষা করে ও ল্যাবরেটরি পরীক্ষা, বায়োপসি বা এফএনএসির মতো পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হন। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের চিকিৎসা না করালে এক জায়গায় আবদ্ধ না থেকে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। মূল উৎপত্তিস্থল থেকে আস্তে আস্তে মেটাস্টেসিসের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ও অন্যান্য অঙ্গ আক্রান্ত করে। তখন আর আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।

সাধারণত চিকিৎসকেরা কোনো টিউমার বিনাইন হিসেবে নিশ্চিত হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ফলোআপে রাখেন, কোনো অস্ত্রোপচার করেন না। তবে এ ধরনের টিউমার ক্ষতিকর না হলেও অনেক সময় বাড়তে বাড়তে বড় ধমনি বা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ও টিস্যুতে চাপ তৈরি করে। তখন অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। তাই রোগী ও রোগের অনেক বিষয় বিবেচনা করে চিকিৎসা করা হয়।

সঠিক সময়ে ধরা না পড়লে স্তন ক্যানসার চতুর্থ ধাপে এসে পৌঁছায়। এ সময় লাল হয়ে ওঠা, স্তনে গরম অনুভূত হওয়া, বগলের নিচে ব্যথা বা প্লি, স্তনের চামড়ায় পরিবর্তন, লসিকা গ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়া, টিউমারের আকৃতি ৫ সেন্টিমিটারের বড় হওয়া বিপজ্জনক। পঞ্চম ধাপে ক্যানসার লসিকা গ্রন্থি ও রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন স্থানে যেমন হাড়, ফুসফুস, লিভার, কিডনি ও রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। তাই শুরুতেই শনাক্ত হওয়া জরুরি।

যেভাবে শুরুতে শনাক্ত করা যায়: যাদের বয়স ৪৫ বছর হয়েছে, তারা এক বা দুই বছর পরপর নিয়মিত ম্যামোগ্রাম (এক ধরনের এক্স-রে) করবেন; যাকে বলা হয় স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম। সাধারণত ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত এটা করা হয়। যাদের বংশগত ইতিহাস বা ঝুঁঁকি আছে, তাদের ৪০ বছরের পর থেকেই নিয়মিত ম্যামোগ্রাম করাতে হবে। নিজে নিজে পরীক্ষা করা জরুরি। প্রতি মাসে একবার গোসলের সময় নিজের স্তন পরীক্ষা করতে হবে। কোনো রকম অস্বাভাবিকতা মনে হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

ডা. মো. ইয়াকুব আলী

অধ্যাপক ও প্রধান, অনকোলজি বিভাগ

এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সাভার, ঢাকা