স্তন ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে এবং দ্রুত চিকিৎসা নিলে বাকি জীবন সুস্থ থাকা সম্ভব। তাই মেয়েদের নিজের স্তন পরীক্ষা করার অভ্যাস করতে হবে। অন্যান্য দেশের মতো নারীদের স্তন ক্যানসার আমাদের দেশেও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সূচনায় চিহ্নিত করতে পারলে এ রোগ নিরাময় করা সম্ভব।
স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে যাদের
ক. বয়স ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে; খ. কম বয়সে ঋতুমতী হওয়া অথবা দেরিতে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া; গ. পরিবারে কারও স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে; ঘ. ৩০ বছর বয়সের পর প্রথম সন্তান নেয়া অথবা বন্ধ্যত্ব; ঙ. স্থূলতা; চ. চর্বিজাতীয় খাদ্য বেশি বেশি গ্রহণ ও শাকসবজি কম খাওয়া; জ. শিশুকে বুকের দুধ পান না করানো; ঝ. মদ্যপান; ঞ. রোগনির্ণয়; ট. নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা; ঠ. প্রত্যেক নারীর উচিত প্রতি মাসে এক দিন স্তন নিজ হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা।
ডাক্তারি পরীক্ষা: স্তনে চাকা বা গোটা হওয়া, স্তনের চামড়া মোটা হওয়া, স্তন ফুলে যাওয়া, স্তনের আকারে বিকৃতি, বোঁটা ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, ব্যথা, স্তনবৃন্ত স্পর্শে ব্যথা, স্তনের বোঁটা থেকে অস্বাভাবিক নিঃসরণ, বিশেষ করে রক্তযুক্ত নিঃসরণ। এমন এক বা একাধিক লক্ষণ যদি দিনের পর দিন দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসক দেখানো উচিত।
ম্যামোগ্রাফি: স্তনের এক্স-রে পরীক্ষার মাধ্যমে চাকা বা প্লি আছে কি না, তা দেখার ব্যবস্থা আছে।
স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা: শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে আক্রান্ত স্তন কেটে বাদ দেয়া অথবা স্তন ও আরও কিছু অংশবিশেষসহ অপারেশন করতে হয়। রেডিওথেরাপি দিয়ে বিশেষ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিকিরণ রশ্মি, যা ক্যানসার কোষ মেরে ফেলা যায়। ক্যানসার-বিধ্বংসী ওষুধ কেমোথেরাপিও প্রয়োজন হতে পারে ।
স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়: কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কিছু স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়। যেমনÑ১. প্রথম সন্তান ৩০ বছরের আগেই নেয়া উচিত; ২. পরিমিত আহার ও হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে সঠিক ওজন বজায় রাখা; ৩. অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাদ্য কম করে খেতে হবে এবং শাকসবজি বেশি খেতে হবে; ৪. মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে; ৫. স্তন ক্যানসার যদি প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা যায় আর সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করা যায়, তাহলে বাদবাকি জীবন সুস্থ থাকা সম্ভব। তাই মেয়েদের নিজের স্তন পরীক্ষা করার অভ্যাস করতে হবে।
ডা. মো. ইয়াকুব আলী
অধ্যাপক, অনকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সাভার, ঢাকা