মানবদেহের অন্য অঙ্গের মতো স্তনেও অস্বাভাবিকভাবে কোষের বৃদ্ধি হতে পারে। এতে স্তনে কোনো চাকা বা পিণ্ডের সৃষ্টি হয়। মূলত শরীরের অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন থেকে এর সৃষ্টি। ক্যানসারজনিত মৃত্যুর মধ্যে সারা বিশ্বে স্তন ক্যানসারের স্থান দ্বিতীয়। শিল্পোন্নত দেশগুলোয় নারীদের বেশিরভাগ অকাল মৃত্যুর কারণ এ ক্যানসার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ঝুঁকি বাড়ে। সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পর এ ঝুঁকি বাড়ে।
কেন বাড়ছে
স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে মূলত দুটি কারণে। একটি অপরিবর্তনযোগ্য অর্থাৎ জেনেটিক, বংশ ও হরমোনের কারণে ঝুঁকি বাড়ছে। এটি পরিবর্তন করা যায় না বা এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। অন্যটি পরিবর্তনযোগ্য অর্থাৎ নিজের হাতে রয়েছে। একটু সচেতনতা এর ঝুঁকি কমাতে পারে। বেড়ে যাওয়ার কারণগুলো দেখে নেওয়া যাক:
# জেনেটিক কিছু কারণে মানুষ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। বিআরসিএ-১ ও বিআরসিএ-২ নামের জিনের মিউটেশন পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ থাকলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে
# বংশগত কারণে আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন দাদি, মা, খালাÑএদের কারও স্তন ক্যানসার হয়ে থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়
# পিরিয়ড শুরু বা বন্ধের ওপরও নির্ভর করে। ১২ বছর বয়সের আগে শুরু ও ৫০ বছর বয়সের পর পিরিয়ড বন্ধ হলে ঝুঁকি থাকতে পারে
স ৫০ বছরের পরও স্তন বাড়তে থাকলে ঝুঁকি থাকে
# এস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবেও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার পর যারা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেন ও যারা দীর্ঘ সময় অতিরিক্ত এস্ট্রোজেন হরমোনের সংস্পর্শে থাকেন, তারা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিতে থাকেন
# বেশি বয়স পর্যন্ত বিয়ে না করা ও ৩০ বছর বয়সের পর সন্তান নেওয়া নারীদের ক্যানসারের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি
# অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার খেলে ও খাদ্যতালিকায় শাকসবজি কম রাখলে ঝুঁকি অনেক বেশি হয়। এছাড়া সব সময় টিনজাত খাবার বা রংযুক্ত খাবার স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী
# দীর্ঘক্ষণ বা সব সময় ব্রা পরে থাকলে ঝুঁকি বাড়ে। কারণ দীর্ঘক্ষণ পরে থাকার ফলে ঘাম নির্গত হতে অসুবিধে হয় ও আর্দ্রতা জমে চামড়ায় সমস্যা হয়। এছাড়া সঠিক মাপের ব্রা ব্যবহার না করা ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে
লক্ষণ
প্রাথমিক কয়েকটি লক্ষণে বোঝা যায় স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন কি না:
# স্তনের চারপাশ পিণ্ড বা চাকার মতো সৃষ্টি হলে বুঝতে হবে কোনো সমস্যা হয়েছে
# স্তনের বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া বা বেঁকে যাওয়া এর লক্ষণ হতে পারে
# বোঁটা দিয়ে অস্বাভাবিকভাবে আঠালো রস বের হওয়া বা রক্তক্ষরণ হওয়া
# স্তনের ত্বকের রং বা আকৃতিতে
পরিবর্তন আসা
# স্তন কিংবা বোঁটায় মাঝেমধ্যে ব্যথা অনুভূত হওয়া
প্রতিকার
# খাবারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ফলমূল ও সবজিজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। যেসব ফলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ রয়েছে, সেগুলো বেশি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে
# নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
# ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
# অতিরিক্ত ধূমপান ও অ্যালকোহলপরিহার করতে হবে
# ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহার করার অভ্যাস করতে হবে। সস্তা পণ্য ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে