Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 2:47 am

স্ত্রীদেরও উদ্যোক্তা হতে দিন, বাধা দেবেন না: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক:সরকারের দেয়া সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে পরিবারের নারীরাও যাতে উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারে, পুরুষদের প্রতি সেই আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল নবম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধানের এ আহ্বান আসে।

তিনি বলেন, দেশে নারীরা একসময় এদিকে ‘একটু পিছিয়ে’ ছিলেন। তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা তেমন ছিলেন না। এখন নারী উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসছেন। সূত্র: বিডি নিউজ।

তিনি বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার প্রদানসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমি আশা করি, সামনের দিকে আরও বেশি নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে।’

এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা, লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার, সহজ শর্তে ঋণ দেয়া, উৎপাদিত পণ্যের প্রসার, প্রচার, বাজারজাতকরণসহ নানামুখী কার্যক্রম সরকার ‘দক্ষতার সঙ্গে’ পরিচালনা করছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের পুরুষদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারাও ব্যবসা করেন। আপনাদের স্ত্রীর নামে যদি আপনারা এই এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নিয়ে তাকেও একটু কাজ করার সুযোগ করে দেন, তাহলে সংসারের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরাও কিন্তু সেই ধরনের শিল্পায়ন করতে পারবে। তাতে উদ্যোক্তাও সৃষ্টি হবে। সেই সুযোগটা অন্তত আপনারা দেবেন। সেখানে বাধা দেবেন না।

দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অঞ্চলভিত্তিক কৃষিপণ্যসহ অন্য যেসব পণ্য দেশে উৎপাদিত হয়, সেগুলো কাজে লাগাতে ওইসব অঞ্চলে শিল্প গড়ে তুলতে হবে। যেন কাঁচা পণ্যটা আমরা আমাদের নিজেদের দেশ থেকে আহরণ করতে পারি, সেদিকটায় বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। তাতে আমাদের দেশ লাভবান হবে, আমাদের কৃষি লাভবান হবে। সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়ন হবে এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে।’

সরকার কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে কোন পণ্যের কেমন চাহিদা আছে, সে অনুযায়ী খাদ্যপণ্য রপ্তানি ও উৎপাদনের পরিকল্পনা নিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘কোন ধরনের কাঁচামাল আমাদের পাওয়া যেতে পারে বা কোন ধরনের শিল্প আমরা সহজে গড়ে তুলতে পারি, সেগুলো বিবেচনায় নিয়েও কিন্তু আমরা শিল্প গড়ে তুলতে পারি। তাতে নিজের বাজার যেমন সৃষ্টি হবে, আবার বিদেশেও আমরা রপ্তানি করতে পারব। আমাদের রপ্তানি পণ্য বৃদ্ধি পাবে। সেভাবেই আমাদের কাজ করতে হবে।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে বাংলাদেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নেও সরকার জোর দিচ্ছে। একটা জায়গায় বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাটা যদি থাকে, তাহলে সেখানে পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণে কোনো সমস্যা হয় না। আমরা সেই বিষয়টার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি।’

দেশবাসীকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘শুধু উৎপাদন নয়, আন্তর্জাতিক মানের যেন হয় পণ্যগুলো, সেদিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। আর এ বিষয়ে আমাদের প্রশিক্ষণ অনেক বেশি প্রয়োজন।’

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘এসএমই ফাউন্ডেশন এরই মধ্যে সারাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ১৭৭টি ক্লাস্টার চিহ্নিত করেছে। এসব ক্লাস্টারসহ সারাদেশে রয়েছে ৭৮ লাখ এসএমই শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নতুন করে একজন মানুষের কাজের ব্যবস্থা হলে কমপক্ষে ৭৮ লাখ বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।’

এসএমই খাতের উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়াতে আওয়ামী লীগ সরকার সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী।

সেইসঙ্গে তিনি এও বলেন, ‘যত্রতত্র কিন্তু শিল্প করা যাবে না। এটা বাস্তব। কারণ আমরা চাই আমাদের কৃষিজমি রক্ষা করতে। খাদ্য চাহিদা কখনও কমবে না, বরং দিনের পর দিন বাড়বে।’

মহামারির মধ্যে খাদ্যচাহিদা বেড়েছে এবং অনেক উন্নত দেশ এখন খাদ্য সংকটে ভুগছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের আল্লাহর রহমতে সেই সমস্যাটা নেই।’

শিল্পকে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে সারাদেশে ১০০ শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গড়ে যাওয়া বিসিক শিল্প নগরীর সম্প্রসারণ ঘটানো হচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘কাজেই সুনির্দিষ্ট জায়গায় সেই শিল্পটা গড়ে তোলা দরকার। যাতে করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাটাও ঠিক থাকে, পরিবেশ ঠিক থাকে, সেগুলোয় বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

অন্যদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের (এসএমইএফ) চেয়ারপারসন মো. মাসুদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।