স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে স্বামীর আত্মহত্যা, পরিবারের দাবী হত্যা

প্রতিনিধি, মেহেরপুর : মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামে স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের জেরে মিরাজুল (৩৭) নামে এক মালয়েশিয়া প্রবাসী আত্মহত্যা করেছে। তবে পরিবারের অভিযোগ, স্ত্রী সাবিনা খাতুনের পরকীয়া প্রেমিক আদম ব্যবসায়ী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জিয়া ও তার সহযোগী খোকা তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকালে বুড়িপোতা ফিল্ডের মাঠে ভারতীয় সীমান্তের ১১৬ নং পিলারের কাছে একটি কাঁঠাল গাছ থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মিরাজুল একই গ্রামের মৃত আওলাদ আলীর ছেলে। সে দুই কন্যা সন্তানের জনক। জানা গেছে, ২০০৬ সালে সাবিনা খাতুনকে বিয়ে করেন মিরাজুল। তাদের ঘরে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে আদম ব্যবসায়ী জিয়ার মাধ্যমে ১৯ সালের দিকে মালয়েশিয়া যান। স্বামীর অবর্তমানে জিয়ার সাথে সাবিনার পরোকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পর থেকে অবাধে মেলামেশা শুরু হয় তাদের। গ্রামবাসীর কাছে অনৈতিক অবস্থায় আটকও হন তারা। পরোকীয়ার বিষয় নিয়ে মিরাজুলের সাথে সাবিনার কলোহের সৃষ্টি হলে সাবিনা বাপের বাড়িতে চলে যায়। তার প্রায় দুই মাস পর মিজারুল দেশে ফিরে আসেন। দেশে এসে মিরাজুল জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলাও করে। তবে জিয়া প্রভাবশালী হওয়ায় উল্টো বিপাকে পড়ে মিরাজুল। মিরাজুলকে বিভিন্নভাবে চাপে রাখে জিয়া। রবিবার রাত থেকে মিরাজুল নিখোঁজ থাকে। পরের দিন সকালে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, জিয়া একজন নারী লোভী চরিত্রহীন মানুষ। তার কারণে এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবার নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে তার দুটি স্ত্রী আছে। সে স্ত্রী দুটিও এভাবেই পরোকিয়া করে ভাগিয়ে নিয়ে আসা। জিয়ার কারণে প্রায় ২০ বছর আগে ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীরের একটি বোন আত্মহত্য করেছিলো। অবৈধ টাকা আর আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এভাবেই সে অনৈতিক কাজ করে বেড়ায়। মিরাজুলের জীবনও সে কেড়ে নিয়েছে।

তারা আরও বলেন, আপনারা তার বিরুদ্ধে নিউজ করে কি করবেন। টাকা দিয়ে সে সবকিছু ম্যানেজ করে নেবে। তার কোন বিচার হবে না। তারপরও আমরা চাই এই দুঃশ্চরিত্র লোকের বিচার হোক যেন আর কোন পরিবার নষ্ট না হয়। কোন সন্তানকে যেন তার বাব—মাকে হারাতে না হয়। মিরাজুলের ভাতিজা অভিযোগ করে বলেন, আমার চাচা বিদেশে থাকা অবস্থায় আদম ব্যবসায়ী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জিয়ার সাথে চাচী সাবিনার পরোকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত হয়। জিয়া নিয়মিত ওই বাড়িতে চলাচল ছিলো। বাড়ির পাশের খোকা নামের এক ব্যক্তি জিয়াকে সহযোগিতা করতো। জিয়াকে গ্রামের কিছু লোক অনৈতিক কাজের সময় আটক করেছিলো। সে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখিয়ে চলে গেছে এছাড়াও সেসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর তাকে চলে যেতে সহযোগিতা করেছে। গত ১১ মাস আগে দেশে আসে আমার চাচা। দেশে এসে জিয়ার নামে মামলা করে। কিন্তু জিয়া টাকার প্রভাব খাটিয়ে বীরের মতো ঘুরে বেড়ায়।

তারপর থেকেই আমার চাচাকে বিভিন্নভাবে চাপে রাখে। যে কারণে আমার চাচা মানষিকভাবে ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। জিয়া এবং খোকা আমার চাচাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। মিরাজুলের ভাই ছাবদার আলী বলেন, আমার ভাই বিদেশ যাওয়ার পর থেকেই জিয়া সাবিনার কাছে যাওয়া—আসা করতো। যা গ্রামের অনেকেই জানে। এর আগেও জিয়া দুইজনের স্ত্রীকে ভাগিয়ে এনে বিয়ে করেছে। সে আওয়ামী লীগ ও টাকার প্রভাব খাটিয়ে এই অন্যায় করে বেড়ায়। আমরা মামলা দিয়েছি সে মামলার তদন্ত আসলো। গ্রামের অধিকাংশ লোক তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিলো কিন্তু তার কিছুই হলো না। জিয়ার সাথে সাবিনার অনৈতিক সম্পর্ক ধরা খাওয়ার পর সাবিনার পরিবার থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় ঘরের আসবাবপত্রসহ টাকা—পয়সা সব নিয়ে চলে যায়। এই ঘটনার দুই মাস পর আমার ভাই দেশে চলে আসে। দেশে আসার পর থেকেই সে মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। গত রাত থেকে সে নিখেঁাজ ছিলো আজ সকালে বাগান থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখে স্থানীয়রা খবর দেয়। আমি মনে করি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মেহেরপুর সদর থানার ওসি সেখ কনি মিয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০