Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 11:56 pm

স্ত্রীসহ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুলিশের এক কর্মকর্তার ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪ হাজার ৪১৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার নাম মো. শাহজাহান। তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ চট্টগ্রাম রিজিয়নের পরিদর্শক। তার আগে লোহাগাড়া থানার ওসি ছিলেন। স্ত্রী ফেরদৌসী আকতার ও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এ মামলাটি দায়ের করেন উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম।

এজাহারে বলা হয়েছে, তারা দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। ১ কোটি ৪৮ লাখ চার হাজার ৪১৩ টাকার সম্পদ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করে ভোগ দখলে রাখার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা, ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, স্ত্রীর মৎস্য ও পোলট্রি ব্যবসা থেকে আয় দাবি করলেও তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। ব্যবসার কথা বলা হলেও ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া অন্য কিছুই পাওয়া যায়নি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র, মৎস্য ও পোলট্রি খামারে মিটার সংযোগ থেকে শুরু করে যাবতীয় রেকর্ডপত্র এবং পরিবেশ ছাড়পত্র, খামারের লেনদেন সংক্রান্তে ব্যাংক স্টেটমেন্ট, মালামাল ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্তে চালান-বিল ভাউচার সংক্রান্ত কোনো প্রামাণ্য রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। তাই তার প্রদর্শিত ওই আয় গ্রহণযোগ্য নয়। ফেরদৌসী তার স্বামী ওসি মো. শাহজাহানের সহযোগিতায়, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরপূর্বক পোলট্রি ও মৎস্য ব্যবসার আয় দেখিয়ে ২ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৩৫ টাকা ভুয়া আয় প্রদর্শন করেছেন।

২০১৭ সালে লোহাগাড়া থানার ওসি মো. শাহজানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়। ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ শাহজাহান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী আকতারের বিরুদ্ধে পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি হয়। ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল ফেরদৌসী আক্তার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।

ফেরদৌসী আকতারের দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৩ কোটি ২১ লাখ ৮৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য দিয়েছেন। স্বামীর কাছ থেকে দান হিসেবে প্রাপ্ত ৪৩ লাখ ১০ হাজার ৮৬৭ টাকার সম্পদ বাদ দিয়ে ঘোষিত মোট স্থাবর সম্পদ ২ কোটি ৭৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৩ টাকা। এছাড়া দুদক যাচাইকালে তার নামে মোট ২ কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৭ টাকার স্থাবর সম্পদ পেয়েছে। এছাড়া তিনি তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে নিজ নামে মোট ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩১ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার নামে ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩১ টাকার অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। দান বাদে তিনি তার নামে মোট ৩ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৬৪ টাকা সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। যাচাইকালে তার নামে মোট ৩ কোটি ২৩ লাখ ১১ হাজার ৭৯৮ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়।

তিনি সম্পদ বিবরণীতে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৪ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপনপূর্বক মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলার খুলশী থানার লালখান বাজার পরশ মঞ্জিল, ১৪ নম্বর হাইলেভেল রোড এলাকায় নির্মিত বাড়ি নির্মাণ ব্যয় বাবদ ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৪ টাকা গোপন করেছেন।

ফেরদৌসী আকতার ২০০৬-০৭ কর বছর থেকে ২০২০-২১ কর বছর পর্যন্ত গৃহসম্পত্তির আয়, বৈদেশিক রেমিটেন্স, ব্যবসার আয় ও অন্যান্য উৎস বাবদ মোট ২ কোটি ৪৩ লাখ ৫১ হাজার ৪২৭ টাকা বৈধভাবে আয় করেছেন। তবে তিনি তার আয়কর রিটার্নে পোলট্রি খামার এবং মৎস্য খামার থেকে ২০১৫-১৬ করবর্ষে ১০ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ করবর্ষে ৪৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ২০১৭-১৮ করবর্ষে ৫১ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ করবর্ষে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৫ টাকা, ২০১৯-২০ করবর্ষে ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৫০ টাকাসহ মোট ২ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৩৫ টাকা আয় প্রদর্শন করেছেন।

আরও জানা গেছে, ফেরদৌসী আকতারের পারিবারিক ব্যয়, কর পরিশোধ ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ মোট খরচ ৫৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৪ টাকা। এছাড়া তাদের যৌথ নামে উত্তরা ব্যাংক লালখান বাজার শাখার বাড়ি নির্মাণের জন্য গ্রহণকরা ১২ লাখ টাকা ঋণের সুদ হিসেবে মোট ৭ লাখ ৩৪ হাজার ২৭০ টাকা পরিশোধ করেছেন। তার অংশের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৭ হাজার ১৩৫ টাকা, যা তার খরচ হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া তিনি মাইক্রোবাস কেনার জন্য ঢাকা ব্যাংক সিডিএ এভিনিউ শাখা থেকে ৬ লাখ টাকা ঋণের সুদ হিসেবে মোট ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৯৫ টাকা পরিশোধ করেছেন। ওই ৩ খাতে তার সর্বমোট খরচ ৬১ লাখ ৬০ হাজার ৭৩৪ টাকা।

ফেরদৌসী আকতার তার স্বামী শাহাজাহানের সহযোগিতায় ২ কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৭ টাকার স্থাবর ও ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩১ টাকার অস্থাবরসহ সর্বমোট ৩ কোটি ২৩ লাখ ১১ হাজার ৭৯৮ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। একই সময়ে তিনি মোট ৬১ লাখ ৬০ হাজার ৭৩৪ টাকা পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় করেছেন। অর্থাৎ ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭২ হাজার ৫৩২ টাকা। ওই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ২ কোটি ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ১১ টাকা। এক্ষেত্রে ফেরদৌসী আকতার ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪ হাজার ৪১৩  টাকার সম্পদ তিনি তার স্বামী শাহজাহান কর্তৃক অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পদ স্থানান্তর হস্তান্তর ও রূপান্তর করে ভোগ দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।