‘আর্থসামাজিক বিবেচনায় কলেজ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হই’

শিক্ষক, পরিচালনা পর্ষদ, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের পরিশ্রম আর আন্তরিকতায় সফল হয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমনই একটি ঝিনাইদহের শৈলকুপা সিটি ডিগ্রি কলেজ। এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ তোফাজ্জেল হোসেনের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছেন শেয়ার বিজের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি দেলোয়ার কবীর

 শেয়ার বিজ: আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে আগ্রহী…

তোফাজ্জেল হোসেন: প্রতিষ্ঠানটি ঝিনাইদহের শৈলকুপার এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। ঝিনাইদহ-শৈলকুপা সড়কের দক্ষিণ পাশে ও শৈলকুপা থেকে শৈলকুপা-মাগুরা সড়কের পশ্চিম পাশে এর অবস্থান। ১৯৯৯ সালে শৈলকুপা পৌরসভার কবিরপুর গ্রামে ১২০ শতক জমির ওপর এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

শেয়ার বিজ: আপনার উদ্যোগ সম্পর্কে বলুন?

তোফাজ্জেল হোসেন: কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় উপজেলায় একটি সরকারি কলেজ ছিল। কলেজটিতে অসচ্ছল মানুষের সন্তানদের লেখাপড়া করার যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধা হতো। তারা উচ্চশিক্ষা হতে বঞ্চিত হচ্ছিল। তাদের শিক্ষার সুবিধার কথা বিবেচনা করে স্থানীয় বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিদের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় এই কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উদ্যোগী হই।

শেয়ার বিজ: কলেজ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হওয়ার গল্প শুনতে চাই।

তোফাজ্জেল হোসেন: শিক্ষকতা মহৎ পেশা। একটি সমাজ বা জাতিকে উন্নত করতে হলে শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাই স্থানীয় আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে কলেজটি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হই।

শেয়ার বিজ: আপনার উদ্যোগ বা প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব কী?

তোফাজ্জেল হোসেন: রাজনীতিমুক্ত ও আধুনিক। ব্যক্তিস্বার্থ বাদ দিয়ে সমাজের স্বার্থ রক্ষা করে এলাকার শিক্ষার সার্বিক অগ্রগতি সাধনে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা দেওয়া হয় এখানে।

শেয়ার বিজ: বর্তমানে কোন কোন বিষয়ে পড়ানো হয়?

তোফাজ্জেল হোসেন: বর্তমানে এইচএসসিতে ২২টি বিষয়, ডিগ্রিতে ১৩টি ও কারিগরি (বিএম) শাখায় দুটি ট্রেডে পড়ানো হয়।

শেয়ার বিজ: গত বছর ডিগ্রিতে পাসের হার কেমন ছিল?

তোফাজ্জেল হোসেন: ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে গত বছর।

শেয়ার বিজ: শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যকার সম্পর্ক কেমন?

তোফাজ্জেল হোসেন: আমাদের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানুষ গড়ার সর্বজনীন স্থান। এখানে ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। আলোচনার মাধ্যমে আমরা যে কোনো সমস্যার সমাধান করে থাকি।

শেয়ার বিজ: এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে আপনার কলেজের ভমিকা কেমন?

তোফাজ্জেল হোসেন: এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নত নয়। এখানকার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। সামগ্রিক শিক্ষার মানও উন্নত নয়। এলাকার ছেলেমেয়েরা উন্নত ও উচ্চশিক্ষার সুুযোগ কম পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিনির্ভর ও কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারলে তারা এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে যেমন ভ‚মিকা রাখতে পারবে, তেমনি দেশের জন্যও তা হবে গুরুত্বপূর্ণ ও মঙ্গলজনক।

শেয়ার বিজ: দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বা বিশেষ সুবিধা?

তোফাজ্জেল হোসেন: দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা উপবৃত্তির আওতায় ডিগ্রি পর্যায়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বছরে পাঁচ হাজার টাকার মতো উপবৃত্তি দেওয়া হয়, যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উৎসাহিত করে। তাছাড়া সরকার বিভিন্ন সময়ের উপবৃত্তি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মেধাবী ও দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের বিনা খরচে ভর্তি, মাসিক বেতন মওকুফ করা প্রভৃতি চালু রয়েছে এখানে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দরিদ্র, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকি।

শেয়ার বিজ: কোনো সমস্যায় পড়েছেন?

তোফাজ্জেল হোসেন: প্রতিষ্ঠালগ্নে প্রথম সমস্যা ছিল শিক্ষার্থীদের কলেজমুখী করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সরকারিভাবে এখনও অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি। তৃতীয়টি হচ্ছে, অধিকাংশ শিক্ষার্থীই তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার প্রতি আগ্রহী নন।

 

শেয়ার বিজ: বর্তমানে কলেজের প্রতিবন্ধকতাগুলো কী?

তোফাজ্জেল হোসেন: কলেজটিতে এক হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। আজও ডিগ্রি স্তরে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি হয়নি। সরকারিভাবে কোনো একাডেমিক ভবন নির্মিত হয়নি। তাছাড়া গ্রন্থাগার ও বিজ্ঞানাগারটি ছাত্রছাত্রীদের জন্য যথেষ্ট নয়।

শেয়ার বিজ: সমম্যা সমাধানে কী করা যেতে পারে বলে মনে করেন?

তোফাজ্জেল হোসেন:  ডিগ্রি স্তরের শিক্ষকদের অবিলম্বে এমপিওভুক্ত করা উচিত। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির জন্য পর্যাপ্ত কম্পিউটার সরবরাহসহ বিশেষ বরাদ্দ নিশ্চিত করা দরকার। সমস্যা সমাধানে অবশ্যই সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত একটি একডেমিক ভবন নির্মাণ ও গ্রন্থাগারের জন্য প্রচুর বইয়ের ব্যবস্থা করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

শেয়ার বিজ: পাঁচ বছর পর প্রতিষ্ঠানটিকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?

তোফাজ্জেল হোসেন: পাঁচ বছর পরে আমার প্রতিষ্ঠানটি প্রযুক্তিনির্ভর হবে বলে আশা করি। শতভাগ পাস, সরকারিকরণ ও আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চাই একে।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০