ইস্পাত শিল্প

স্থানীয় বাজারে বিএসআরএম রপ্তানিতে শীর্ষে জিপিএইচ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: করোনা সংক্রমণের মধ্যে সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের বড় ইস্পাত উৎপাদন কারখানা বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড (বিএসআরএম) ও বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড স্থানীয় বাজারের ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে। এ দুই প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন; যার অর্থমূল্য ছিল ১১ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটি নিট মুনাফা করে ৮০১ কোটি টাকা। একই খাতের আরেক জায়ান্ট কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাতও গত অর্থবছরের এককভাবে চীনে ৩৬৯ কোটি টাকার বিলেট রপ্তানি করে রেকর্ড গড়ে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন সূত্র মতে, দেশের পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ইস্পাত খাতের একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে বিএসআরএম গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড ও বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড এবং জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড শীর্ষ ইস্পাত প্রতিষ্ঠান। বিএসআরএম গ্রুপের বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড ও বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড অতিমারি করোনায় রেকর্ডস পরিমাণ উৎপাদন ও বিক্রি করেছে। এর মধ্যে  বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড ২০২০-২১ অর্থবছরের ইস্পাতপণ্য উৎপাদন করেছিল আট লাখ ২৮ হাজার ২১৪ মেট্রিক টন। আর বিক্রি করেছিল আট লাখ ৬৫ হাজার ২১৮ মেট্রিক টন। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় রাজস্ব ছিল পাঁচ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। এতে নিট মুনাফা হয়েছিল ৪৯৭ কোটি তিন লাখ টাকা। আগের অর্থবছর যা ছিল ৯২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ছয় লাখ টন উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে মোট উৎপাদন করে আট লাখ ১৬ হাজার ৪৯৪ মেট্রিক টন। আর বিক্রি করে আট লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৭ মেট্রিক টন। এতে বিক্রয় রাজস্ব দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৪৯৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আর নিট মুনাফা হয় ৩০৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা; যা আগের অর্থবছরে ছিল ৭৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। একই সময়ে মোট বিক্রয় রাজস্ব ছিল তিন হাজান ৮৬৮ কোটি টাকা।

এছাড়া স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বিদেশিও রপ্তানি বেড়েছে বিএসআরএমের দুই প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড গত অর্থবছর চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও থাইল্যান্ডে ৫১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ইস্পাত পণ্য রপ্তানি করে; যা আগের বছরে ছিল পাঁচ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অপর প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিলস ৩২ কোটি ৪০ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করে। অর্থাৎ গত ২০২০-২১ অর্থবছরের বিএসআরএম সমন্বিত রপ্তানি ছিল ৮৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকার।

এ বিষয়ে বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের কোম্পানি সচিব শেখর রঞ্জন কর বলেন, চাহিদা থাকায় আমাদের উৎপাদন ও বিক্রি বেড়েছে। ফলে করোনার মধ্যেও ভালো ব্যবসা হয়েছে। আর স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি রপ্তানিও বেড়েছে।

ইস্পাত খাতের আরেক জায়ান্ট জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নত প্রযুক্তি সমৃদ্ধ কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেসের স্টিল মিল স্থাপন করে; যা শুধু বাংলাদেশে নয়, এশিয়া মহাদেশেই এ ধরনের প্রযুক্তির প্রথম ইস্পাত কারখানা। আর এ কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে দেশের ইস্পাত খাতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এ কারণে জিপিএইচ ইস্পাতের অভ্যন্তরীণ বাজার ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও পণ্য নজর কাড়ে। এ কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জিপিএইচ ইস্পাত চীনে শুধু বিলেট রপ্তানি করেছে ৩৬৯ কোটি ৯২ লাখ টাকার। আর রড, বিলেট ও জিঙ্ক অক্সসাইড রপ্তানি করে ৩৭১ কোটি ৬২ লাখ টাকার। এটি ইস্পাত থাকে যাবতকালের সবচেয়ে বড় রপ্তানি চালান। বর্তমানের তাদের বার্ষিক বিলেট উৎপাদন সক্ষমতা ১০ লাখ ৫০ টন এবং এমএস রড উৎপাদন ক্ষমতা সাত লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। প্রতিষ্ঠানটির পুরো বছরের মোট বিক্রয় রাজস্ব ছিল দুই হাজার ৮১৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটি নিট মুনাফা করে ১৬৬ কোটি টাকা; যা আগের অর্থবছরে ছিল ২৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল বলেন, ‘বিশ্বের প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সবচেয়ে উন্নত দেশ চীন। এ চীন থেকে কয়েক বছর আগেও আমাদের ইস্পাত কারখানাগুলো বিলেট আমদানি করত। সেই চীনে আমরা বিলেট রপ্তানি করছি। এটা আমাদের দেশের জন্য গৌরবের। এ অর্জন সম্ভব হয়েছে উন্নত প্রযুক্তিসমৃদ্ধ কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেসে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মানের জন্য। আর গুণগত মান নিশ্চিত হওয়ায় আমাদের প্রতিষ্ঠান বিশ্বমান অর্জন করেছে। ফলে চীন থেকে নিয়মিত রপ্তানি আদেশ পাচ্ছি। এ পর্যন্ত ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিলেট রপ্তানি করেছি।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০