বৈশ্বিক মহামারির সময়ে স্থূলতা ও বিষন্নতার হার অনেক বেড়ে গেছে। গবেষকদের মতে, বিষন্নতার সঙ্গে ওজন বৃদ্ধির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ওজন বাড়লে মানসিক অবস্থারও পরিবর্তন ঘটে, আর বিষন্নতাও ঘিরে ধরে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে বিষন্নতা বেশি দেখা যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক ওজনের মানুষের চেয়ে স্থূলতার সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিষন্নতায় ভোগার হার প্রায় ৫৫ শতাংশ বেশি।
ওজন বৃদ্ধির পরিণতির শিকার হতে হয় নারীদের বেশি। যেসব নারীর অতিরিক্ত ওজন, তাদের মধ্যে সন্তান জন্মদানে অক্ষমতার হারও বেশি। অতিরিক্ত মেদ শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা তাদের ঋতুচক্র ও ডিম্বাণুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়। আবার বিষন্নতা বা মন খারাপ থাকার কারণে অনেকেই মিষ্টিজাতীয় বা তৈলাক্ত খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়েন। প্রতিদিন অন্তত দুই টুকরা আপেল খেলে বিষণœতা কমে যায়; বিশেষ করে মধ্যবয়সী নারীদের জন্য এটা বেশি কার্যকর।
পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বিষন্নতা দূরীকরণে কিছু খাবারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে শস্যজাতীয় খাবার, আখরোট, তেলসমৃদ্ধ মাছ, মাশরুম, আপেল, কলা ও ননিহীন দুগ্ধজাতীয় খাবার। গ্রিন টিতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা কেবল বিষণœতাই নয়, মানসিক চাপও কমায়। হলুদ দিয়ে রান্না করা তরকারিও উপকারী। হলুদে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা প্রদাহরোধী ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। ডার্ক চকলেটে থাকা পলিফেনল মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটায়। পালংশাকে উচ্চমাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা ক্লান্তি ও বিষণœতা দূর করে। এ ছাড়া এই শাক আয়রনের চমৎকার উৎস। কাজেই রক্তস্বল্পতা কমিয়ে শরীর ও মন চাঙা করতে পালংশাকের জুড়ি নেই। টমেটোর ফলিক অ্যাসিড ওজন কমানোর পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়।
সঠিক ওজন বজায় রাখার জন্য খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার, যেমন ভাত, রুটি ও আলুর পরিমাণ কমাতে হবে। লাল চাল, লাল আটা, ওটস খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে হবে। সবুজ শাকসবজি বেশি খেতে হবে। ট্রান্সফ্যাট, যেমন কেক, পেস্ট্রি ও গরু-খাসির মাংস কম খেতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। দৈনিক আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান এবং আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। হাঁটা সহজ ও কার্যকর একটি ব্যয়াম।
নূর-ই-জান্নাত ফাতেমা
পুষ্টিবিদ