Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 11:34 am

স্বজনদের জীবিত ফিরে পাওয়ার আকুতি

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: ইউক্রেনের বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাবিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় হাদিসুর রহমান নামের একজন নাবিক নিহত হয়েছেন। অন্যরা এখন পর্যন্ত নিরাপদে থাকলেও আক্রান্ত নাবিকের স্বজনরা উদ্বেগ প্রকাশ করে। স্বজনরা তাদের নিরাপদ ও জীবিত ফিরে পেতে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আকুতি জানান।

জানা যায়, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছে। এর মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হয়ে যাওয়ায় ২৯ নাবিকসহ সেখানেই আটকা পড়ে জাহাজটি। মূলত ইউক্রেন থেকে সিরামিকের কাঁচামাল নিয়ে তাদের ইতালিতে যাওয়ার কথা ছিল। বাংলার সমৃদ্ধি কার্গো লোড না করে নোঙর করা ছিল। গত বুধবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টায়) এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে উড়োজাহাজ থেকে রকেট হামলা হয়। এ হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। এ হামলায় জাহাজের ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় জাহাজ থেকে ক্রু যদি নেমে যান তাহলে জাহাজের ঝুঁকি আরও বাড়বে।

এদিকে চট্টগ্রামের বিএসসি কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক তুহিনের বাবা আবুল কাশেম ও তার ভাই মো. ওমর শরীফ। আবুল কাশেম বলেন, রকেট হামলার খবর পেয়ে আর বাসায় থাকতে পারছি না। আমার সন্তান রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের মাঝে পড়ে গেল। সেইসহ জাহাজের সবাই এখন ভয়ংকর পরিস্থিতির সামনে আছে। প্রতি মুহূর্ত বিপদের ভয় আছে। আমাদের ওমর ফারুক সমৃদ্ধি জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী। আমাদের বাড়ি সন্দ্বীপে। ফারুক বিএমএ ৩৫ ব্যাচের। আমরা চাই সরকারের উদ্যোগে নিরাপদে ২৮ জন নাবিকদের দ্রুত নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হোক। 

বিএসসির নির্বাহী পরিচালক ড. পীযূষ বলেন, ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে রকেট হামলায় থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা গেছেন। জাহাজের বাকি ২৮ জন নাবিক-ক্রু অক্ষত আছেন। তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার আগে বন্দরের তীর থেকে কাউকে সেফটি ও সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে কাজ চলছে। আমরা ইউক্রেন সরকার, আমাদের সরকার, দূতাবাস কিংবা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকেও সহযোগিতা পেতে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছি। যে কোনো এক জায়গা থেকে পেলেও আমরা সেক্ষেত্রে জাহাজের নাবিক-ক্রুদের অনুমতি দেব।’ তিনি আরও বলেন, জাহাজটি না পাঠানোর সুযোগ ছিল না। চার্টারার যদি যেতে চায় আইনগতভাবে না পাঠানোর সুযোগ নেই। ক্যাপ্টেনের পারফরম্যান্সে আমরা সন্তুষ্ট। তারা জীবনবাজি রেখে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন ক্ষয়ক্ষতি কমানোর।

অন্যদিকে পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানায়, ‘বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা সবাই ভালো আছেন। অলিভিয়া পোর্ট থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ টাগবোটের মাধ্যমে ২৮ নাবিক ক্রুকে নিরাপদে জেটিতে সরিয়ে নেবে। আর জেটিতে আনার পর বন্দরের গেট পার হয়ে বাসে করে মলদোভিয়া নিয়ে যাবে। সেখানে বাংকার আছে। সেখানে থাকতে হবে। যুদ্ধ পরিস্থিতি ল্যান্ডে পদে পদে ঝুঁকি আছে।

গতকাল সচিবালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা খুবই নাজুক একটি অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছি। আমাদের জাহাজ কয়েক দিন ধরেই সেখানে আটকা অবস্থায় আছে। এটা বাণিজ্যিক জাহাজ, যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে থাকার কথা। তারপরও বন্দরের মধ্যে মাইন সেট করার কারণে চ্যানেলটা বন্ধ হয়ে গেছে এবং পোর্ট কর্তৃপক্ষ পাইলটিং প্রত্যাহার করার পর সেখানে আটকে গেছে। এর মধ্যে হামলরার শিকার হলো সমৃদ্ধি। এ ঘটনায় হাদিসুর রহমান নিহত হয়েছে। তার লাশ জাহাজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাকিদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে সব রকমের চেষ্ঠা চলছে।’