স্বতন্ত্র প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাবে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিএনপি। দলের কেউ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে কাউকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেবে না বিএনপি। বিএনপির কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে স্বতন্ত্র প্রতীকে অংশ নিতে হবে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর গতকাল দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন যে হচ্ছে, ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচন হচ্ছে। এখনও পুরো ইউপি নির্বাচনে তফসিল আসেনি। এর মধ্যে আমাদের কাছে বিভিন্নভাবে আমাদের নেতাকর্মীরা জানতে চাচ্ছেন যে, এখানে আমাদের অবস্থান কী হবে? আপনারা জানেন যে, ইতিপূর্বে যখন দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন করার প্রশ্ন এসেছিল, তখনই আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম যে, পার্টির মার্কা দিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করাটা বাংলাদেশের জন্য উপযোগী হবে না এবং এটা বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করবে রাজনীতির ক্ষেত্রে। আমরা এখনও মনে করি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে মার্কা ব্যবস্থা তুলে নেওয়া উচিত। প্রকৃতপক্ষে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয়দের মার্কা ছাড়াই নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, বিএনপির যে সব নেতাকর্মী বা যারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন তারা যদি কেউ অংশ নিতে চান, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু মার্কা সেক্ষেত্রে আমরা বরাদ্ধ করব না।’
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ওই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া শতাধিক নেতাকে বহিষ্কারও করে দলটি।
নয়ন বন্ডের ‘ক্রসফায়ার’ নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন: বরগুনায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফ নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের ক্রসফায়ারে মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রিফাত হত্যার পর যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা বাংলাদেশের আইন-আদালত ও রাষ্ট্রের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশ করা হয়েছে। দেখুন যে, নয়ন বন্ড প্রধান আসামিকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, নয়ন বন্ডকে হত্যা করার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- আসল মদতদাতাদের আড়াল করা। তারা যেন আলোচনায় না আসতে পারে, সে জন্য এটা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, আইনের শাসনের জন্য মারাত্মক হুমকি- এটা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।’
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি প্রতিবেদনে এসেছে গত ৬ মাসে ৪৩৮ জনকে ক্রসফায়ার ও এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হতে হয়েছে। গতকাল সম্ভবত আদালতে একটা আদেশ এসেছে। এর আগেও হাইকোর্টের একটা আদেশ ছিল, কোনো মতে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা যাবে না। এটা সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থি, আইনের শাসন পরিপন্থি, সংবিধান পরিপন্থি। অর্থাৎ এটা প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে, এই দেশে এখন আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। জনগণের বেঁচে থাকার যে অধিকারটুকু সেটাও এখন নেই। কারণ তারা এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে যে কোনো সময়ে যে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করার অধিকার তারা নিয়ে নিয়েছে। যেটা আমরা মনে করি একটা স্বাধীন দেশে আইনের শাসনের পরিপন্থি।’
বিকাল ৪টা থেকে দুই ঘণ্টা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির এ বৈঠক হয়। বৈঠকে মির্জা ফখরুল ছাড়াও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন। লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০