মেহেদী কবীর: বিকাল ৪টা বাজতেই ছুটির আনন্দে হৈ-হুল্লোড় করে বাড়ির পানে মত্ত শিক্ষার্থীরা, ঠিক তখনই বই খাতা হাতে একদল শিক্ষার্থী ছুটছে স্কুলের দিকে। ছিন্ন বসন, খালি পা ছুটে চলা এসব শিক্ষার্থীর চোখে-মুখে একরাশ স্বপ্ন। তা সত্যি করতে কিছু প্রিয় ভাইয়া-আপু সেই স্বপ্নের সহযাত্রী হওয়ার চেষ্টায় বিকালের আড্ডা বাদ দিয়ে হাসিমুখে অ, আ, ক, খ বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
এমনটিই সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কিন’-এর শিক্ষাবিষয়ক কার্যক্রম ‘কিন স্কুল’-এর দৈনন্দিন দৃশ্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের সুবিধাবঞ্চিতদের স্বপ্নের স্কুল হয়ে দাঁড়িয়েছে এ স্কুলটি। পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন, দেশকে ভালোবাসার পাঠও দেওয়া হয় এখানে।
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কিন প্রথম থেকেই আর্তমানবতায় সেবায় নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ‘চেনা হোক প্রতিটি মুখ শিক্ষার আয়নায়’ স্লোগানে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করে ‘কিন স্কুল’।
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কিন শুরু থেকেই মানবতার সেবায় নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ‘চেনা হোক প্রতিটি মুখ শিক্ষার আয়নায়’ স্লোগানে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ চালু করে ‘কিন স্কুল’। এক যুগেরও বেশি সময় ক্যাম্পাসের পাশের এলাকাগুলোয় যারা পড়াশোনার খরচ চালাতে খুব বেশি একটা উৎসাহী নয় কিংবা অক্ষম তারাই পড়তে আসে এ স্কুলে। আবার অনেককে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলেকয়ে আনা হয়। একবার এলে আর ফেরত যেতে চায় না কোনো শিক্ষার্থীই। এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা-উপকরণও মেলে। সংগঠনের সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও সিনিয়র ভাইদের সাহায্যেই চলে মূলত স্কুলটি। এছাড়া মাঝেমধ্যে তহবিল সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামের আয়োজন করে থাকে কিন। আলাপচারিতায় বিষয়গুলো জানালেন কিনের বর্তমান সভাপতি গণিত বিভাগের শিক্ষার্র্থী নিশান খানদানি।
তিনি জানান, সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে, তাদের অনুচ্চারিত স্বপ্নগুলোকে বাস্তবের আলোয় নিয়ে আসতে কাজ করছে কিন স্কুল। সপ্তাহের প্রতিদিনই বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলে এ স্কুলের ক্লাস। কিন স্কুলে আসা সব শিশুকে বিনা মূল্যে খাতা, কলম, রাবার, স্কেল, পেনসিলসহ যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক পরিশুদ্ধতার জন্য চিত্রাঙ্কন, নাটক, গান, ভালো ব্যবহার, স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রভৃতি বিষয় নিয়মিত কার্যক্রমেরই অংশ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় দিবসগুলোতে নিয়মিত পারফর্ম করে এ স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
প্রতিষ্ঠাকালীন স্মৃতিচারণা করছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি তুর্য সাহা। তিনি বলেন, এ পথচলার শুরু এতটা সহজ ছিল না। তখন স্কুল চালানোর জন্য কোনো শ্রেণিকক্ষ ছিল না। একাডেমিক ভবন ডি-এর একটি কক্ষ, পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের সিঁড়িতে পাঠদান করা হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলটি ব্যবহার করছে কিন স্কুল। ৪০ জন শিশু নিয়ে যাত্রা শুরু করা কিন স্কুলে বর্তমান নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২০ এর মতো। এছাড়া আরও অনিয়মিত প্রায় ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী আসা-যাওয়া করে।
‘শিক্ষা কোনো সুযোগ নয়, শিক্ষা অধিকার। আমরা আমাদের জায়গা থেকে যতটুকু করা দরকার তা করছি, সবাই যদি এভাবে এগিয়ে আসতো তাহলে এতটা সমস্যায় থাকতে হতো না আমাদের। একসময় সব ধরনের প্রতিকূলতা ভেদ করে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হয়ে উঠবেÑএমনটিই প্রত্যাশা সংগঠনের সহকারী প্রকাশনা সম্পাদক নিশাত নাবিলার।
স্কুলে পাঠদান ছাড়াও নিয়মিত রক্তদান কার্যক্রম, শীতবস্ত্র বিতরণ, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য তহবিল সংগ্রহ (বইমেলা কিংবা চ্যারিটি শোয়ের মাধ্যমে) এবং সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রম করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি।