Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:11 am

স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎসে কর কর্তন হবে ই-টিডিএস সিস্টেমে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আয়কর খাতে উৎসে কর ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আনল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এখন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাটা হবে উৎসে কর। স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎসে কর কর্তন ও মামলাজট কমানোসহ কর ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে ই-টিডিএস সিস্টেম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পদ্ধতি চালু হওয়ায় রাজস্ব ফাঁকি কমবে, বাড়বে আদায়। গতকাল এনবিআর উদ্ভাবিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ই-টিডিএস উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিএজি মুসলিম চৌধুরী এ সংস্কার যুগান্তকারী উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে উৎসে কর মোট আয়করের ৬০ শতাংশ। অটোমেশন কার্যকর হওয়ায় উৎসে কর আদায় বেড়ে ৮৫ ভাগ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

সিএজি বলেন, ‘আমাদের রিফান্ড ব্যবস্থায় (ট্যাক্স ফেরত) বড় ধরনের জটিলতা আছে। এটা নিয়ে কোনো হাংকি পাংকি করা চলবে না। এ কাজে অবশ্যই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কর বিভাগে রিফান্ডের অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো নয়। এখানে পরিবেশ উন্নতি করতে হবে। অটোমেশন সিস্টেম চালু হওয়ার ফলে ট্যাক্স আদায়ে গতি বাড়বে।’

অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘আমাদের কর সংস্কৃতি খুবই দুর্বল। মাত্র ১০ পারসেন্ট লোক কর দেয়। অথচ ২ কোটি লোক ট্যাক্স দেয়ার সামর্থ্য রাখে। আমি সবসময় বলি ট্যাক্স রেট কমাতে। কারণ ট্যাক্স রেট কমালে আওতা বাড়বে।’

সচিব আরও বলেন, ‘আমরা এখন উৎসে কর কর্তনের ফাইলিং সিস্টেম চালু করেছি। আমাদের পেমেন্টের দিকে যেতে হবে।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এ সিস্টেম উৎসে কর কর্তন, সরকারি কোষাগারে জমাদান ও রিপোর্টিংয়ের অটোমেটেড সিস্টেম কর ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। মামলা জট কমে আসবে। এছাড়া রাজস্ব ফাঁকি কমবে ও রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে তিনি জানান।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আয়কর আইনে ৩৪টি ধারায় উৎসে কর কর্তন ও ১৯টি ধারায় উৎসে কর সংগ্রহ করার বিধান রয়েছে। এ ৫৩টি ধারার অধীন উৎসে কর কর্তন ও সংগ্রহ ম্যানুয়ালি মনিটর করা সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। উৎসে কর কর্তন করে প্রত্যেকটি উৎসে কর কর্তন কর্তৃপক্ষকে ২টি অর্ধবার্ষিক রিটার্ন এবং ২৪টি মাসিক বিবরণীসহ সর্বমোট ২৬টি রিপোর্ট দাখিল করতে হয়। এছাড়া নির্ধারিত হারে কর কর্তন, সঠিক কোডে ও যথাসময়ে উৎসে কর কর্তন কর্তৃপক্ষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নব উদ্ভাবিত এ অটোমেশন ব্যবস্থা কার্যকরের পর আয়কর প্রশাসনের রাজস্বের প্রধান খাত উৎসে কর ব্যবস্থাপনায় আর্থিক শৃঙ্খলা জোরদারকরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ফলে রাজস্ব ফাঁকি কমবে ও রাজস্ব আদায় বাড়বে।

সূত্রে আরও জানিয়েছে, অটোমেশনের ফলে উৎসে কর খাতে বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র ও এর সঙ্গে সংযুক্ত চালান জমা দিতে কষ্ট এবং বিভিন্ন গাণিতিক হিসাব পরিগণনায় বিভ্রান্তি দূর হবে। এ সিস্টেমে একজন উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ লগইন করে তার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন ও এ চালান সিস্টেমের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক কর পরিশোধ করতে পারবেন। ফলে আয়কর কর্তৃপক্ষ সহজে মনিটর পারবে।

২০২০ সালের মে মাসে ই-টিডিএস সিস্টেমের কাজ শুরু হয়। গত ১ ডিসেম্বর ই-টিডিএস সিস্টেমের টেস্ট রান কার্যক্রম ও ই-টিডিএস ল্যাব উদ্বোধন হয়। এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট ও কর অঞ্চল- ১, ২ ও ৬তে ই-টিডিএস সিস্টেম পাইলটিং করা হয়।