Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:45 pm

‘স্বল্প মূলধনি’ ও ‘জাঙ্ক’ শেয়ারে ঝোঁক বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক:দেশের পুঁজিবাজার সূচকের নামমাত্র বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহ পার করেছে। তবে এর আগের দুই সপ্তাহে পতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। সপ্তাহটিতে সূচক কিছুটা বাড়লেও লেনদেন কমেছে সাড়ে ২৩ শতাংশ। গত সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটদর অপরিবর্তিত ছিল। মুদ্রানীতি ঘোষণার পর কিছু বিনিয়োগকারী খাতভিত্তিক নির্দিষ্ট শেয়ার কিনে সুযোগ নিয়েছেন। কারণ পতনে বেশ কিছু শেয়ারের দর কমেছে। সেই সঙ্গে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণার পর বাজারে থাকা উদ্বেগগুলো কিছুটা কমায় ফ্লোর প্রাইসে থাকা শেয়ারে বিনিয়োগ

বাড়ায় সূচক বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে এর আগে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থান নেয়ায় এখনও অনেকে হাতে টাকা রেখে দিয়েছেন। ফলে লেনদেন কমেছে বলে জানা গেছে। আলোচ্য সপ্তাহে বিমা খাতের শেয়ার কেনায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি ছিল। ফলে বিমা খাতে সবচেয়ে বেশি কেনার চাপ থাকায় সপ্তাহটিতে দর বৃদ্ধি ও

লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে আলোচ্য খাতের শেয়ার। এছাড়া গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের বিক্রি ও কেনার চাপ উভয় দিক থেকে থাকায় কোনো খাতে দর কমেনি।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩৯ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ৩১৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক সাত পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে ও ডিএস-৩০ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে পাঁচ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ১৮৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৯৫৮ কোটি ৪৭ লাখ ৪৪ হাজার ১৬২ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল তিন হাজার ৮৬৯ কোটি ৬১ লাখ ১১ হাজার ৩২৫ টাকা। অর্থাৎ ৯১১ কোটি ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৩ টাকার শেয়ার লেনদেন কমেছে, যা শতাংশের হিসাবে ২৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ সপ্তাহে বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে মোট ৩৯৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন। এর মধ্যে ১৬২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, তার বিপরীতে কমেছে ২৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২০৮টির।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের সূচক ইতিবাচক অবস্থায় ফিরেছে কিছু বিনিয়োগকারীর কারণে। এর আগে পতনে খাতভিত্তিক কিছু নির্দিষ্ট শেয়ারের দর কমে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করেছে। কারণ মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ তুলে সতর্ক অবস্থান নেন। মুদ্রানীতি ঘোষণার পর উদ্বেগ কিছুটা কমে। এতে ফ্লোর প্রাইসে থাকা শেয়ারে আবার বিনিয়োগ শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা।

তারা আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের মনোভাব কিছুটা উন্নত হলেও মুনাফার আশায় তাদের বিনিয়োগে আধিপত্য করছে বিশেষ কিছু স্বল্প পরিশোধিত মূলধন ও জাঙ্ক শেয়ার। কারণ বিনিয়োগকারীরা দ্রুত মুনাফার আশায় সেসব শেয়ারে অবস্থান নিতে পছন্দ করছেন। এছাড়া বিমা খাতের শেয়ারও আগের সপ্তাহে বড় সংশোধনের পরে ইতিবাচক অবস্থায় ফিরে এসেছে, যা বাজারের শেষ কার্যদিবসে সূচক ও লেনদেনে কিছুটা অবদান রেখেছে বলে তারা জানান।

এদিকে গত সপ্তাহে আগ্রহ বেশি থাকা বিমা খাতের শেয়ারদর বেড়েছে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পাট খাতে গত সপ্তাহে দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২ দশমিক ৭০ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল সেবা ও আবাসন খাতের শেয়ার। অন্যদিকে গত সপ্তাহে লেনদেনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বিমা খাতে। খাতটিতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ লেনদেন হয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত।

দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক ৯৭ পয়েন্ট বেড়ে ১৮ হাজার ৬৫৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ সময় লেনদেন হয়েছে ৮৯৮ কোটি ২৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫৯৮ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৯ টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১১৫টির, কমেছে ৩৬টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।