ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট প্রভৃতি কোম্পানি এক সময় স্বল্প মূলধনি ছিল। এসব কোম্পানির ব্যবসা দিন দিন বেড়েই চলেছে, কখনই তা কমেনি। আর আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে যেসব স্বল্প মূলধনি কোম্পানি ৪০ বছর আগে এক কোটি টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল, এখনও তাদের পরিশোধিত মূলধনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এসব কোম্পানির উন্নতির কোনো ধারাবাহিকতাও লক্ষ্য করা যায় না বরং উল্টো চিত্র দেখা যায়। পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বল্প মূলধনি কোম্পানির জন্য আলাদা মার্কেট করতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসীন, টেকনিক্যাল এনালিস্ট মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ এবং আমার স্টক ডট কমের সিইও মোহাম্মদ আলী জাহাঙ্গীর।
মুহাম্মদ মহসীন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজার একই অবস্থানে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছুদিন আগে টার্নওভার প্রায় ৬০০ কোটি ছিল। হঠাৎ করে তা ৬০০ কোটি টাকার অর্ধেকে নেমে এলো। এর সঙ্গে সূচকও একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এটাকে স্বাভাবিক পুঁজিবাজার বলা যায় না। আসলে পুঁজিবাজারের এ অবস্থার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। বিশেষ করে চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচন এবং আরও বিভিন্ন ধরনের ইস্যু রয়েছে। তবে নির্বাচনের পর পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
পুঁজিবাজারের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, দেশের পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম যে হারে বাড়ে অন্য দেশে তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাইরের দেশের কোনো পুঁজিবাজারের যখন স্বল্প মূলধনি কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত হয় তখন ওই সব কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের ক্রিয়েটিভ আইডিয়া থাকে। বিশেষ করে কীভাবে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আনা যায়, কীভাবে গ্রোথ বাড়ানো যায় এবং কীভাবে কোম্পানি সম্প্রসারিত করা যায় প্রভৃতি কারণে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। উদাহরণস্বরূপ ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট প্রভৃতি কোম্পানি এক সময় স্বল্প মূলধনি ছিল। অর্থাৎ এসব কোম্পানির গ্রোথ দিন দিন বেড়েই চলেছে, কখনই তা কমেনি। আর আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে যেসব স্বল্প মূলধনি কোম্পানি ৪০ বছর আগে এক কোটি টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল তাদের পরিশোধিত মূলধনে কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং এসব কোম্পানির উন্নতির কোনো ধারাবাহিকতাও লক্ষ্য করা যায় না বরং উল্টো চিত্র দেখা যায়। পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বল্প মূলধনি কোম্পানির জন্য আলাদা মার্কেট করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ক্যাপিটাল মার্কেট এবং আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যখন কোনো সমস্যা হয় তখন ওই সব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থার যে কাজটি করা উচিত তা করে না। ফলে ওই সব প্রতিষ্ঠানের সমস্যা ধীরে ধীরে আরও বেড়ে যায়।
বিনিয়োগকারীর উদ্দেশ তিনি বলেন, কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে ফান্ডামেন্টাল এবং টেকনিক্যাল এনালিসিসের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানতে হবে।
মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, দেশের অর্থনীতির চিত্রানুযায়ী জনগণের কাছে টাকার অভাব নেই। কিন্তু কেন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হচ্ছে না। কারণ বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার মতো অবস্থা নেই। তাই বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। যখন পুঁজিবাজার নিম্নগতিতে থাকে তখন মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের তুলনায় স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেশি বৃদ্ধি পায়। তাই স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে কোম্পানির বিভিন্ন তথ্য ভালো করে জানতে হবে এবং বুঝে শুনে কিনতে হবে। কারণ এখানে ঝুঁকির মাত্রা বেশি থাকে।
মোহাম্মদ আলী জাহাঙ্গীর বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ বলেন, প্রতিটি বিনিয়োগকারীর শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট মূল্যে গেলে বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করবে। এখন কথা হচ্ছে যদি ওই কোম্পানির শেয়ার কোনো কারণে নির্দিষ্ট মূল্যে না যায় সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর একটি কৌশল থাকা দরকার যে এ মূল্যে গেলে শেয়ারটি সে বিক্রি করবে এবং অবশ্যই সেখান থেকে বেড়িয়ে যাবে। ধরি, কোনো বিনিয়োগকারীর পোর্ট ফোলিওতে ১০টি কোম্পানির শেয়ার কেনা আছে। সেক্ষেত্রে ওই বিনিয়োগকারীর ১০টি কোম্পানির মধ্যে ছয়টিতে লোকসান হলেও বাকি চারটিতে যে লাভ হবে তাতে ছয় কোম্পানির শেয়ারের লোকসান এড়ানো সম্ভব হবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ