দেশের পুঁজিবাজারে ইদানীং বড় সমস্যা হচ্ছে, যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা, সেগুলো বাড়ছে না। বরং বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ বেশিরভাগ স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই। এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কেন বাড়ছে তা খতিয়ে দেখা উচিত। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আহছান উল্লা এবং একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র বিজনেস এডিটর কাজী আজিজুল ইসলাম।
মোহাম্মদ আহছান উল্লা বলেন, গত বছরে পুঁজিবাজারের সূচক ও লেনদেনে ছিল নি¤œমুখী প্রবণতা। এর পেছনে কিছু কারণ ছিল। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন ও আরও বিভিন্ন ইস্যু ছিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী নিরাপদ অবস্থানে ছিল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল মাত্র ৪০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের শুরু থেকে প্রায় প্রতিদিন গড় লেনদেন বেড়ে ৯০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত এক মাসে পুঁজিবাজারে গড় লেনদেন বেড়েছে দুই গুণ। নির্বাচনের পর পুঁজিবাজারে গতি ফিরে এসেছে এবং প্রত্যাশিত গন্তব্যে এগোচ্ছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা ফিরে আসছে।
তিনি আরও বলেন, খাতভিত্তিক লেনদেনে আগে দেখা যেত কোনো খাতে একটানা চার থেকে পাঁচ দিন শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেত, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কোনো খাতে এক দিন বাড়লে পরদিনই সংশোধিত হচ্ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ২০১৯-২০ সালে পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে যাবে। কারণ সামনে কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা ঘটার শঙ্কা নেই। ২০১৮ সালে চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ দেশের পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাদের বিনিয়োগ বেড়ে যাবে। গত তিন থেকে চার মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। অর্থাৎ সব দিক বিবেচনা করলে সামনে পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে যাবে বলে মনে করি।
তিনি বিনিয়োগকারীর উদ্দেশে বলেন, পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন থাকবেই। কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনার আগে ওই কোম্পানির শেয়ার দাম যৌক্তিক পর্যায়ে আছে কি না এবং বিগত বছরের ইপিএস, পিই রেশিও ও লভ্যাংশের হার প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে বিনিয়োগ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কম।
কাজী আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন মাত্র চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অন্য দেশের পুঁজিবাজারের দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে সে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে পুঁজিবাজারেও দুই থেকে তিন শতাংশ টার্নওভার বৃদ্ধি পায়। যদি তিন শতাংশও বৃদ্ধি পায়, সে হিসাবে প্রতিদিন টার্নওভার হওয়ার কথা ১২ থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকা। দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে এবং অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক। অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে দেশের পুঁজিবাজার যেভাবে উন্নয়ন হওয়ার কথা, সেটি কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। এটাই হচ্ছে মূল সমস্যা।
দেশের পুঁজিবাজারে আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা, তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়। অর্থাৎ বেশিরভাগ স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে কোনো কারণ ছাড়াই। এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কেন যুক্তি ছাড়াই বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
তিনি আরও বলেন, নতুন সরকার ও নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হয়েছে। বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন হয়েছে। যিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন, তিনি অনেক বিচক্ষণ। অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার বিচক্ষণতা কাজে লাগাতে হবে এবং ইতিবাচক হতে হবে। বিশেষ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ এবং দেশের অর্থনীতিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যে আগ্রহ, এসব বিষয়ে ইতিবাচক থাকলে দেশের অর্থনীতির আমূল পরির্বতন হবে এবং এর ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ