স্বস্তি ফিরছে বাজারে, দোকানে ঝুলছে মূল্য তালিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই মাসজুড়ে টালমাটাল ছিল দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা। সেই অবস্থা গড়ায় আগস্টেও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত বৃহস্পতিবার শপথ নিয়েছে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। নব্য গঠিত সরকারের প্রথম দিন গতকাল শুক্রবার বাজারে স্বস্তিভাব বিরাজ করছে। গতকার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অনেকটা স্বস্তিভাব বিরাজ করছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে।

কোটাবিরোধী আন্দোলন ও আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা এরপর সরকারের পতন সব মিলিয়ে স্থবির হয়ে পড়েছিল দেশের অর্থনীতি। বাজারে পণ্য সরবরাহে দেখা দিয়েছিল তীব্র সংকট। বিক্রেতারা বলছেন, সেই সংকট অনেকটা কেটে গেছে। এছাড়া দেশের শৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন কাজ করছেন বাজার নিয়ন্ত্রণেও। দোকানে পণ্যের মূল্যতালিকা লাগানো, ট্রেড লাইসেন্স চেক করা, যৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি করা, নিজ দোকানের সামনে পরিচ্ছন্ন রাখা ও নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা, সব বিষয়ে নজরদারির কাজ করছেন তারা। বাজারে শিক্ষার্থীদের এমন উপস্থিতিতে প্রশংসা জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষ। তবে কোনও কোনও বিক্রেতা জানিয়েছেন, কাঁচাবাজারে মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন।
বাজার নিয়ন্ত্রণে সময় দেয়া শিক্ষার্থীদের একজন আবু নাইম বলেন, ‘আমরা চাই, দেশের সঙ্গে বাজারেও পরিবর্তন আসুক। আমরা চেষ্টা করছি, তারা যাতে যৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি করেন। এমন দামে যাতে তারা বিক্রি না করেন, যেন তাদের লোকসান হয়। কিন্তু ক্রেতারা যেন স্বস্তি পান কিছুটা। আমরা দেখেছি, কোনো এক বিক্রেতা মাছ কিনেছেন হয়তো ৮০০ টাকা দিয়ে কিন্তু বিক্রি করছেন ৯০০ বা ৯৫০ টাকায়। তারা ১০০ থেকে ১৫০ টাকা লাভ করছেন। এটা ক্রেতাদের জন্য চাপ বাড়িয়ে দেয়। আমরা বলেছি, তাদের যে ৮০০ টাকায় কিনে ৮৫০ টাকায় বিক্রি করলে তো লোকসান হয় না। কিন্তু তারা নানা খরচ দেখিয়ে বলেন, ট্রাক ভাড়া, ভ্যান ভাড়াসহ নানা কিছু। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি, যাতে তারা নিজেদের লোকসান না করে দাম কমিয়ে বিক্রি করেন।’

এ সময় মাছ বিক্রেতা তপন বলেন, ‘ছাত্ররা যে কাজ করছে, এটায় আমরা খুশি। কিন্তু তারা আমাদের বলে যে মাছের মূল্যতালিকা লাগাতে। কিন্তু মাছের মূল্যতালিকা এভাবে লাগানো যায় না। আমরা একই মাছ একেকজনে একেক দামে কিনে আনি। আমরাও সে রকম দামেই বিক্রি করি। তাই সবার বিক্রয় দাম এক হবে না। আবার আমার কোনও মাছ যদি ৫০০ টাকায় কিনি, সেটা সকালে হয়তো ৭০০ টাকায়ও বিক্রি করি। কিন্তু বিক্রি কমে গেলে ৬০০, ৫০০ বা ৪৫০ টাকায়ও বিক্রি করতে হয়। কারণ আমরা তো মাছ রেখে দিতে পারব না। তাই লোকসান দিয়ে হলেও বিক্রি করে দিই। এভাবেই আমরা ব্যালেন্স করি। তাই মূল্যতালিকা লাগানো কঠিন।’

এদিকে গতকাল শুক্রবার মুদি দোকানগুলোয় দেখা যায়, সবাই মূল্যতালিকা টাঙিয়ে রেখেছেন। ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার রাখার চেষ্টাও করছেন কেউ কেউ। সেলিম জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. সেলিম বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের কাজে শতভাগ সাপোর্ট জানাই। তাদের সঙ্গে আমি আছি। তারা আমাকে বলে গেছে, মূল্যতালিকা লাগাতে; আমি সঙ্গে সঙ্গেই লাগিয়েছি। তারা বলেছে দোকানের আশপাশে পরিষ্কার রাখতে; আমি কর্মীকে দিয়ে পরিষ্কার করিয়েছি। দেশে সুন্দর পরিবর্তন আসুক, এটা আমরা সবাই চাই।’

ক্রেতা এমদাদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা দেশটাকে স্বাধীনই করে দিয়েছে। এখন তারা দেশ গড়ার কাজে নেমেছে। আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। আমরা বলতে চাই, আমরা তাদের পাশেই আছি।’
গতকাল বাজারে ভারতীয় টমেটো ১৫০ টাকা, দেশি গাজর ৯০, চায়না গাজর ১৬০, লম্বা বেগুন ৬০, সাদাগোল বেগুন ৬০, কালো গোল বেগুন ৮০, শসা ৬০ থেকে ৮০, উচ্ছে ৮০, করল্লা ৮০, কাঁকরোল ৮০, পেঁপে ৪০, ঢেঁড়স ৭০, পটোল ৪০ থেকে ৭০, চিচিঙ্গা ৫০, ধুন্দল ৬০, ঝিঙা ৮০, বরবটি ৮০, কচুরলতি ৯০, কচুরমুখী ৮০, মিষ্টিকুমড়া ৪০, কাঁচামরিচ ২৬০ ও ধনেপাতা ৩০০ কেজি দরে বিক্রি হয়। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৭০ টাকা, চালকুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হয়। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচাকলা ৪০ টাকা ও হালি লেবু বিক্রি হয় ২৫ টাকা করে।

এ ক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, কিছু সবজির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত আবার কিছু সবজির দাম কমেছে একই পরিমাণ। তবে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে ৬০ টাকা ও ধনেপাতার দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। আবার কিছু সবজির দাম ছিল অপরিবর্তিত। এদিকে গতকাল বাজারে আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ১২০ টাকা ও বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৩০ টাকায়। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়
১৩০ টাকা করে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সব ধরনের পেঁয়াজের বেড়েছে ১০ টাকা করে।

এ ছাড়া লাল আলু ৬০ টাকা, সাদা আলু ৬০, বগুড়ার আলু ৭০ থেকে ৮০, দেশি রসুন ২২০, চায়না রসুন ২২০, চায়না আদা ২৮০ থেকে ৩০০ ও ভারতীয় আদা মানভেদে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। আর দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, চায়না রসুনের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা, চায়না আদার দাম বেড়েছে ২০ টাকা ও ভারতীয় আদার দাম বেড়েছে ২০ টাকা। বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকা, রুই ৩৬০ থেকে ৬০০, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০, কালিবাউশ ৩৫০ থেকে ৬০০, চিংড়ি ৯০০ থেকে ১২০০, কাঁচকি ৫০০, কই ২২০ থেকে ৩০০, পাবদা ৪৫০ থেকে ৮০০, শিং ৪০০ থেকে ৬০০, টেংরা ৫০০ থেকে ৭০০, বেলে ১০০০ থেকে ১২০০, বোয়াল ৬০০ থেকে ১২০০ ও রূপচাঁদা ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
কেজিতে ৩০ টাকা কমে গতকাল গরুর মাংস বিক্রি হয় ৭৫০ টাকা কেজি দরে। আর খাসির মাংস ১১৫০ টাকা কেজি দরে। বিভিন্ন দোকানে মুরগির লাল ডিম ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হয়।

ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৫৮ থেকে ১৬৮ টাকা, কক মুরগি ২৬০ থেকে ২৭০, লেয়ার মুরগি ৩১৫, দেশি মুরগি ৫৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, গতকাল ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ১২ টাকা, কক মুরগির দাম বেড়েছে ২৫ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ৫ টাকা, দেশি মুরগির দাম কমেছে ২০ টাকা। গতকাল মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। প্যাকেট পোলাওর চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওর চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১৪০, ছোট মুসরডাল ১৩৫, মোটা মুসরডাল ১১০, বড় মুগডাল ১৬০, ছোট মুগডাল ১৮০, খেসারি ডাল ১০০, বুটের ডাল ১৩০, ডাবলি ৮০, ছোলা ১১৫ ও মাষকলাই ডাল ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০, খোলা ঘি ১২৫০, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫, খোলা চিনি ১৩০, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া এলাচি ৪৫০০ টাকা, দারুচিনি ১৫০, লবঙ্গ ১৬০০, সাদা গোল মরিচ ১৬০০ ও কালো গোলমরিচ ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০